মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

পবিত্র হজের বিধি বিধান মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

মুলতাজামে উপস্থিতি (মুস্তাহাব) : হাজরে আসওয়াদ ও বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার মধ্যবর্তী দেয়ালকে মুলতাজাম বলে। তাওয়াফের নামাজ পড়ে জমজমের পানি পানের পর অন্যকে কষ্ট না দিয়ে সম্ভব হলে মুলতাজামে এসে দেয়ালের সঙ্গে বুক ও ডান গাল লাগিয়ে দিন এবং ডান হাত ওপরের দিকে উঠিয়ে বাইতুল্লাহ শরীফকে জড়িয়ে ধরুন এবং তাকবীর ও দরুদ শরীফ পড়ে বিনয় ও কান্নাকাটির সঙ্গে খুব দোয়া করুন। তবে বেশি জোরে আওয়াজ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা, জোরে আওয়াজ করা বেআদবি। এ স্থানে দোয়া কবুল হয়। মনে করবেন, আপনি যেন আল্লাহ তা’য়ালার রহমতের ছায়াতলে আছেন, তাঁর কাছে পৌঁছে গেছেন। তাঁর অপার মেহেরবাণীতে তিনি আপনাকে কাছে টেনে নিয়েছেন। রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯; গুনইয়াতুন নাসিক ১০৭
বি. দ্র. : কাবা ঘরের দেয়ালের চতুর্দিকে প্রায় এক মানুষ পর্যন্ত আতর লাগানো থাকে। মুলতাজামে গিয়ে কাবা ধরলেই আতর হাতে বা গায়ে লেগে যাবে, যা ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ। তাই ইহরাম অবস্থায় মুলতাজাম ধরবেন না এবং কাবা শরীফের কোথায়ও স্পর্শও করবেন না।
ইহরাম, তাওয়াফসহ হজের বিভিন্ন পর্যায়ে মহিলাদের বিশেষ আমল ও পরিস্থিতি সম্পর্কিত মাসায়েলের আলোচনা স্বতন্ত্রভাবে আসছে।    ওমরাহ সাঈ (প্রথম ওয়াজিব) পালন করতে হবে।
সাঈর নিয়ত : সাঈর জন্য নিয়ত করা মুস্তাহাব। সাফা পাহাড়ে সামান্য উঠে বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে হাত না উঠিয়ে মনে মনে এভাবে সাঈর নিয়ত করুন, হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের ল্েয (ওমরার) সাঈ করছি। আমার জন্য তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।
সাঈর পদ্ধতি : সাঈর জন্য যাওয়ার সময় হাজরে আসওয়াদে ‘আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ইছতিলাম করা মুস্তাহাব। হাজরে আসওয়াদ বরাবর সবুজ বাতি বা এর পেছন থেকেও ইছতিলাম করতে পারবেন। এ জন্য মাতাফে নামতে হবে না। মানাসিক ১৪০; রদ্দুল মুহতার ২/৫০০        ইছতিলামের পর সোজা ‘সাফা’ পাহাড়ে উঠুন।
সাফা পাহাড়ে উঠে যা করবেন : প্রথমে কাবার দিকে ফিরে দাঁড়ান। সম্ভব হলে এখান থেকে কাবাকে দেখুন। অতঃপর তিনবার আল্লাহু আকবার বলুন। এরপর তিনবার এই দোয়া পড়ুন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং কাদির।  মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৩০২৫২
এরপর দরুদ শরীফ পড়ুন এবং হাত তুলে প্রাণখুলে নিজের জন্য পরিবার, পরিচিত নিকটজন এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করুন। এটা দোয়া কবুলের সময়।
দোয়া ও মুনাজাতের পর ডান দিকের রাস্তা দিয়ে সোজা মারওয়ার দিকে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা শুরু করুন। এরপর সাফা-মারওয়ার মাঝে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ুন। বিশেষত সবুজ দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে এ দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব, রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া তাজাওয়াজ আম্মা তা’লাম ইন্নাকা আনতাল আ’আযযুল আকরাম।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে মা করুন, রহম করুন। মার্জনা করুন, যা আপনি জানেন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী।
সবুজ দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থান পুরুষের জন্য মধ্যমগতিতে দৌড়ে অতিক্রম করা মুস্তাহাব।
 এরপর মারওয়া পৌঁছে কাবার দিকে ফিরে দাঁড়ান। সাফায় যেভাবে যেসব জিকির ও আমল করেছিলেন এখানেও করবেন। শেষে উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করে নিন। এটিও দোয়া কবুলের স্থান। এখন সাঈর এক চক্কর পূর্ণ হলো। মানাসিক ১৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫০১
এরপর ফের সাফার উদ্দেশে রওনা করুন। সাফায় আগের মতো আমল ও দোয়া করুন। এবার দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হলো। আবার মারওয়া পৌঁছলে তৃতীয় চক্কর পূর্ণ হবে। এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করে নিন। সপ্তম চক্কর মারওয়ায় শেষ হবে। রদ্দুল মুহতার ২/৫০১; মানাসিক ১৮০
সপ্তম চক্কর মারওয়ায় শেষ হওয়ার পর কাবা শরীফের দিকে ফিরে দোয়াটি করুন। সাঈর কাজ শেষ হলো।
এরপর মসজিদে হারামে গিয়ে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়া মুস্তাহাব। রদ্দুল মুহতার ২/৫০১; মানাসিক ১৮০
ওমরার ইহরাম ত্যাগ করা :
হলক করা (উমরার দ্বিতীয় ওয়াজিব) সাঈ সমাপ্ত হওয়ার পর তামাত্তু হজকারী এবং শুধু ওমরাহকারীরা পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের অনুসরণে পূর্ণ মাথা মুণ্ডাবেন এবং ওমরার ইহরাম ত্যাগ করবেন। তবে মাথার চুল ছোটও করতে পারেন। চুল ছোট করতে চাইলে পুরো মাথার কিংবা অন্তত মাথার এক-চতুর্থাংশের চুল কমপে আঙুলের এক কর পরিমাণ ছোট করতে হবে। আগে থেকে চুল এক কর বা এর চেয়ে ছোট থাকলে সে েেত্র ছোট করা যথেষ্ট হবে না। মাথা মুণ্ডাতে হবে। আর মহিলারা পুরো মাথার চুলের অগ্রভাগ থেকে কমপে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবেন। গুনইয়াতুন নাসিক-১৭৩
মনে রাখতে হবে, মারওয়ার ওখানে কেউ কেউ হালাল হওয়ার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি চুল কেটে নেন। এমনটি কিছুতেই করা যাবে না। কেননা, এত অল্প পরিমাণ চুল কেটে হালাল হওয়া যায় না।
এ পর্যন্ত ওমরার কাজ শেষ হলো।
তামাত্তু হজকারী এখন থেকে হজের ইহরাম বাঁধার পূর্ব পর্যন্ত বৈধ সব কাজ করতে পারবেন। অবশ্য হারামের এলাকায় সাধারণভাবে নিষিদ্ধ কাজ যেমন-ঝগড়া করা, যুদ্ধ করা, শিকার করা ও গাছ কাটা তখনও নিষিদ্ধই থাকবে।
হজের ফরজ ও ওয়াজিব
হজের ফরজ ৩টি : ১. ইহরাম বাঁধা ২. উকুফে আরাফা অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ও ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা।
হজের ওয়াজিব : ১. মুযজদালিফায় নির্দিষ্ট সময় উকুফ (অবস্থান) করা। ২. সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা। ৩. নির্দিষ্ট দিনে জামারাতে রমি (কঙ্কর নিপে) করা। ৪. কিরান বা তামাত্তু হজ পালনকারীর জন্য দমে শোকর বা হজের কোরবানি করা। ৫. মাথার চুল হলক করা বা ছোট করা। ৬. মিকাতের বাইরে থেকে আগত লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ করা, যা বাংলাদেশী হাজীদের জন্যও প্রযোজ্য।
হজের ৫ দিনের ধারাবাহিক আমল
৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মোট ৫ দিন হলো হজের মূল সময়। ১৩ জিলহজেও হজ সংশ্লিষ্ট কিছু ঐচ্ছিক আমল আছে। নিম্নে এই দিনগুলোর আমল সম্পর্কে ধারাবাহিক বিবরণ দেয়া হলো।
হজের প্রথম দিন : ৮ জিলহজের কাজ
১. হজের ইহরাম করা (ফরজ) ; ২. ইহরামের পর থেকে বেশি বেশি তালবিয়া পড়া (সুন্নত) ; ৩. মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা (সুন্নত) এবং ৪. মিনায় অবস্থান করা (সুন্নত)। নিম্নে ধারাবাহিক বিবরণ দেয়া হলো।
হজের ইহরাম (ফরজ) : যারা ইহরাম অবস্থায় নেই তারা ৮ জিলহজ মিনা রওনা হওয়ার আগেই হারাম শরীফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে নেবেন।
হজের মধ্যে তালবিয়া পড়ার সময়কাল : হজের ইহরামের পর থেকে তালবিয়া শুরু হবে এবং ১০ জিলহজ্ব জামরা আকাবায় কঙ্কর নিেেপর আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবেন। কঙ্কর নিেেপর সময় থেকে তালবিয়া পড়া বন্ধ।
মিনায় রওনা : মিনায় রওনা হওয়ার উত্তম সময় হলো ৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর। রওনা হওয়ার আগে দু’চার রাকাত নামাজ পড়ে নিন। ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনাতে পড়া সুন্নত। (গুনইয়াতুন নাসিক : ১৪৬)
মিনায় অবস্থান (সুন্নত) : ৮ জিলহজ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে ৯ জিলহজ্ব সকাল পর্যন্ত পুরো সময় মিনায় অবস্থান করা মুস্তাহাব। আর ৮ জিলহজ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। অবশ্য বেশিরভাগ রাত থাকলেই এই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। (গুনইয়াতুন নাসিক : ১৪৬)
মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন এবং এ পর্যন্ত পুরো সময় মিনাতেই থাকুন। তালবিয়া, জিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মশগুল থাকুন। গল্গ-গুজব থেকে বিরত থাকুন।
জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ার কারণে মিনার এলাকার বাইরে বহু তাঁবু লাগানো হয়। যেহেতু এটি জায়গা সঙ্কীর্ণতার ওজরে করা হয়েছে, তাই এসব তাঁবুতে অবস্থানকারীরাও ইনশাআল্লাহ মিনায় অবস্থানের ফজিলত পেয়ে যাবেন।
হজের দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজের কাজ
১. উকূফে আরাফা (হজের দ্বিতীয় ফরজ) ২. রাতে মুযদালিফায় অবস্থান (সুন্নত)।
তাকবিরে তাশরিক শুরু : ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়া হাজীদের ওপরও ওয়াজিব। এ বিষয়ে প্রত্যেকের যতœবান হতে হবে। (আদদুররুল মুখতার ২/১৭৯)
আরাফার উদ্দেশে রওনা : ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশে রওনা হওয়া উত্তম। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৪৭৬৬)
আরাফায় রওনা হওয়ার সময় হাদিস শরীফে কিছুটা উঁচু স্বরে তালবিয়া এবং আল্লাহু আকবার পড়তে পড়তে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে। (মুসলিম, আবু দাউদ)
ভিড়ের কারণে বহু লোক ৮ তারিখ রাতেই আরাফায় চলে যান। মুয়াল্লিমের গাড়িগুলোও রাত থেকেই হাজী সাহেবদের আরাফায় পৌঁছাতে শুরু করে। এভাবে রাতে চলে যাওয়া ঠিক নয়। এ রাতে আরাফার ময়দানে থাকলে কোনো সওয়াব হবে না; বরং এতে একাধিক সুন্নাতের খেলাফ হয়। যেমন : এক. এ রাতে মিনায় থাকা সুন্নত। এটি আদায় হয় না। দুই. ৯ তারিখ ফজর নামাজ মিনায় পড়া সুন্নত। এটাও ছুটে যায়। তিন. সূর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া মুস্তাহাব। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৪৭৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩) সেটাও আদায় হয় না। তাই সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে যেন বাসগুলো অন্তত ফজরের পর ছাড়ে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে বৃদ্ধ ও মহিলারা মাহরামসহ আগে চলে যাবেন। আর সুস্থ সবল হাজীরা কোনো অভিজ্ঞ সঙ্গী পেলে মিনায় ফজরের নামাজ পড়ে পায়ে হেঁটে আরাফায় যেতে পারেন।
হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন উকুফে আরাফা আদায়ের দিন। ৯ জিলহজ্ব জোহরের শুরুর সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ কয়েক ঘণ্টা পুরো হজের মগজ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই পুরো সময় আল্লাহ তা’য়ালার দিকে দিল ও মনকে নিবিষ্ট রাখুন এবং দোয়া-মুনাজাত, কান্নাকাটি ও জিকর-আসকারে মশগুল থাকুন। এক মুহূর্তও যেন গাফলতির মধ্যে না কাটে।
উকুফে আরাফার সময় : সূর্য ঢলার পর থেকেই উকুফ করা সুন্নত। সূর্যাস্তের আগে আরাফায় পৌঁছে গেলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফ করা ওয়াজিব। সূর্যাস্তের আগে আরাফা ত্যাগ করা জায়েজ নয়। আরাফায় উকুফের প্রধান সময় ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত। কিন্তু কেউ যদি এ সময়ের ভেতর আরাফায় পৌঁছতে না পারেন, তাহলে আগত রাতের সুবহি সাদিকের মধ্যে যে কোনো স্বল্প সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকলেও এই ফরজ আদায় হয়ে যাবে। (গুনইয়াতুন্নাসেক ১৫৭; হিন্দিয়া ১/২২৯; আহকামে হজ ৬৩)
জোহর ও আসর একত্রে পড়া : আরাফার কেন্দ্রবিন্দু মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারলে জোহর ও আসর একত্রে ইমামের পেছনে আদায় করে নেবেন। কিন্তু মসজিদে নামিরার জামাতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হলে জোহরের সময় জোহর এবং আসরের সময় আসর পড়বেন। কেউ তাঁবুতে জোহর-আসর একত্রে পড়লে তার অনুসরণ করবেন না এবং তার সঙ্গে তর্ক-বিতর্কেও লিপ্ত হবেন না। কারণ একটি মত অনুযায়ী তার নামাজও সহিহ। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৪২৩৫; আদদুররুল মুখতার ২/৫০৫)
আরাফার ময়দানে থাকাকালে পুরো সময় আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভ করা এবং তাঁর সঙ্গে একাকিত্ব হওয়ার অপূর্ব মুহূর্ত। তাই কথাবার্তা বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত হবেন না।
এ সময় দোয়া কবুলের ওয়াদা আছে, মাগফিরাতের ওয়াদা আছে। তাই এ সময়ের প্রধান কাজ দোয়া-মুনাজাতে লিপ্ত থাকুন।
সূর্যাস্তের আগে আরাফা থেকে বের না হওয়া : অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মুযদালিফায় রওনা হয়ে যায়। এরূপ হয়ে গেলে কর্তব্য হলো আবার আরাফায় ফিরে যাওয়া। যদি ফিরে না যায় তবে জরিমানা-দম দিতে হবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৪৭৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩; গুনইয়াতুন নাসিক ১৪৬)
মুযদালিফায় রওনা : আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন। এ মাগরিব নামাজ এশার সময় মুযদালিফায় গিয়ে পড়তে হবে। সূর্যাস্তের পর কালবিলম্ব না করে মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হয়ে যাওয়া উত্তম।
৯ যিলহজ দিবাগত রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। (মানাসিক ২১৮)
মুযদালিফায় একত্রে মাগরিব ও এশা : ৯ তারিখ দিবাগত রাতের মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে মুযদালিফায় গিয়ে একত্রে পড়া ওয়াজিব। প্রথমে মাগরিব, এরপর সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গিয়ে এশা পড়বেন।
হজের ৩য় দিন ১০ জিলহজের কাজ : ১. উকুফে মুযদালিফা (ওয়াজিব) ২. মুযদালিফা থেকে ১ম দিনের কঙ্কর সংগ্রহ (মুস্তাহাব) ৩. জামরা আকাবার রমি করা (কঙ্কর মারা) (ওয়াজিব) ৪. দমে শোকর বা কোরবানি (ওয়াজিব) ৫. মাথার চুল কাটা (ওয়াজিব) ৬. তাওয়াফে জিয়ারত (হজের তৃতীয় ফরজ) ৭. হজের সাঈ (ওয়াজিব)। নিম্নে এসবের ধারাবাহিক বিবরণ পেশ করা হলো।
উকুফে মুযদালিফা (ওয়াজিব) : উকুফে মুযদালিফার প্রধান সময় ১০ তারিখ সুবহি সাদিক থেকে চারদিক খুব ফর্সা হওয়া পর্যন্ত। সুবহি সাদিকের পর অল্প সময় অবস্থানের পর মুযদালিফা ত্যাগ করলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে একেবারে ফর্সা হওয়া পর্যন্ত অপো করা সুন্নত। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৫৫৬৫; মানাসিক ২১৯)
মাসআলা : অতিশয় বৃদ্ধ, দুর্বল কিংবা অম রোগীর জন্য মুযদালিফায় অবস্থান না করে আরাফা থেকে সোজা মিনা বা মক্কায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের ওপর দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। (মানাসিক ৩৫৬)
কঙ্কর সংগ্রহ : প্রথম দিনের সাতটি কঙ্কর মুযদালিফা থেকে সংগ্রহ করা মুস্তাহাব। অবশ্য অন্য জায়গা থেকে নিলেও কোনো তি নেই। তবে জামরার কাছ থেকে নেবেন না।
মিনায় রওনা : ১০ জিলহজ সূর্যোদয়ের সামান্য আগে মিনার উদ্দেশে রওনা করুন। এর চেয়ে বিলম্ব করা সুন্নতের খেলাফ। (রদ্দুল মুহতার ২/৫১২; আহকামে হজ ৭২) কান্ত-শ্রান্ত শরীরে এমনিতেই ধীরে চলতে হয়। আর এসময় গাম্ভীর্যের সঙ্গে ধীর গতিতে চলাটাই মুস্তাহাব। তাই শুধু নিয়ত করে নিন। পথিমধ্যে তালবিয়া বেশি বেশি পড়ুন। সঙ্গে অন্যান্য জিকিরও করুন।
 

                  জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল

                        কে এম মিজানুর রহমান

জিলকদ মাস শেষের পথে। আর ক’দিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে আরবী বর্ষের শেষ মাস পবিত্র জিলহজ। পবিত্র হজ ও কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ আমল তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দরুন তার গুরুত্বও বেড়ে গিয়ে বছরের বিশেষ সময়ে পরিণত হয়েছে। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বছরের উল্লেখযোগ্য দিনগুলোর অন্যতম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদের সূরায় ফজরে তার শপথ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, প্রভাতের শপথ এবং ১০ রজনীর শপথ। রঈসুল মুফাসসিরীন হজরত ইবনে আব্বাস রা. এর মতে, এই ১০ দিন হলো জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন। মহান আল্লাহ তা’য়ালার এই ১০ দিনের শপথ তার বিশেষত্ব বোঝায় নিশ্চয়ই। তাই বিশেষ দিনের আবেদন ও দাবি অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন।
জিলহজ মাস পবিত্র হজ ও কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ দুই ইবাদতের সমাবেশ ঘটে। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা প্রেমাস্পদের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রেমমেলায় হাজির হয়ে ‘লাব্বায়িক লাব্বায়িক’ ধ্বনিতে সব মুখরিত করে তোলেন। অন্যদিকে পৃথিবীজুড়ে মুসলমানরা ধর্মীয় পিতা হজরত ইবরাহীম আ. ও ইসমাঈল আ. এর স্মৃতিবিজড়িত ত্যাগের নমুনাস্বরূপ কোরবানি করে ধন্য হন। এছাড়া এ সময়ের সঙ্গে আরও আমলও সম্পৃক্ত আছে। তবে আনন্দের ব্যাপার হলোএই ১০ দিনের যে কোনো ইবাদতের সওয়াব অন্য সময়ের তুলনায় বহুগুণে বেশি। ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে এই ১০ দিনের আমলের চেয়ে প্রিয় আর কোনো আমল নেই। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর পথে জিহাদও কি তার চেয়ে উত্তম নয়? তিনি উত্তর দিলেন, না; তবে কেউ যদি আপন জানমাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে অতঃপর শহীদ হয়ে যায় তার কোনো কিছুই ফিরে না আসে (বুখারি)। তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হয়েছে আমলের জন্য আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম ১০ দিনের চেয়ে প্রিয় আর কোনো দিন নেই। তার একদিনের রোজা এক বছরের রোজার সমান এবং প্রতি রাতের ইবাদত শবেকদরের ইবাদতের সমান। তাই জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন সওয়াবের ভরা বসন্ত। যে কোনো ইবাদতই তাতে করা যেতে পারে। দিনে নফল রোজা ও রাতে নফল ইবাদতের মাধ্যমে তার সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে।
জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রোজার মর্যাদা আরও বেশি। রাসুল সা. ইরশাদ করেন, আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, আল্লাহ তার মাধ্যমে আগে ও পরের এক বছরের গোনাহ মা করে দিবেন (মুসলিম)।
অপরিসীম গোনাহ থেকে অল্প আমলের বদলে মুক্তি পেতে কে না চায়? এই ১০ দিনের আরেকটি বিশেষ আমল হলো, জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত নখ, চুল ও শরীরের পশম না কাটা। ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের থেকে যারা কোরবানির ইচ্ছা করে তারা যেন জিলহজ মাস শুরুর পর নখ, চুল ও শরীরের অন্যান্য পশম না কাটে।
স্মরণ রাখতে হবে, কোরবানিই এ সময়ের মূল ইবাদত। তাই সাধ্যানুপাতে নফল ইবাদতের পাশাপাশি নিষ্ঠার সঙ্গে কোরবানি করার পূর্ণ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কোরবানির পশুর মহড়া নয়, পশু কোরবানির আগে মনের পশুত্বকে কোরবানি করে আল্লাহর যে কোনো নির্দেশ যথাযথ পালনের জন্য প্রস্তুত হয়ে কোরবানিকে সার্থক করতে হবে। না হয় এেেত্র এতো টাকা ব্যয় করে কেবলই গোশত কিনে তি বৈ লাভ কি?

             হজের আহকাম : অব্যক্ত প্রেমের প্রতীক

                            মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ

প্রাচীনকালের মানুষ ছিল প্রযৌক্তিক উন্নতিবঞ্চিত। আজকের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কথা তাদের কল্পনাশক্তির ধারে কাছেও এসেছিল কিনা সন্দেহ হয়। সে যুগের মানুষ বিবেক-ঊর্ধ্ব বিস্ময়কর কোনো কিছু দেখলে সেটাকে মুজিজা মনে করে বসত। মনে করত, এ কাজ একমাত্র ঐশী শক্তির মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে। এ কাজ মানুষের সাধারণ শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি পানির ওপর চলত অথবা বাতাসে চড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেত, তখন মানুষ মনে করত এটি বিরাট মুজিজা। সুতরাং মানুষের হৃদয়ে সে ব্যক্তি ও তার কাজের মান এবং মূল্য বেড়ে যেত বহুগুণে। তারা তাকে সাধারণ মানুষের পোশাকে অসাধারণ মানুষ মনে করত। কিন্তু আজ, প্রযুক্তির ভরাযৌবনে, বিস্ময়কর ও বিবেকচমকানিয়া কাজের প্রকার ও প্রকৃতি পাল্টে গেছে। মুজিজা ও কারামাতের নতুন মাপকাঠি আবিষ্কার করেছে আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। এমন বহু কাজ যেগুলোকে পুরনো যুগে অলৌকিক ও অসাধারণ মনে করা হতো, সেগুলো এখন জ্বলন্ত বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। সেগুলো এখন মানুষী শক্তির খুব নাগালে এসে পৌঁছেছে। মানুষ এখন সেসব কাজ খুব সহজ ও সাধারণভাবে সম্পন্ন করতে সম। হজ সত্যিই একটি বড় মুজিজা। মুজিজা আবার এক জিনিসের নয়, একই সঙ্গে বহু জিনিসের : প্রেম-ভালোবাসার, একতার, একতায় বৈচিত্রের, নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং আরও বহু কিছুর।
মানাসিক শব্দটি আরবি গ্রামার হিসেবে মানসাকুন শব্দের বহুবচন। হজ সম্পর্কিত গ্রন্থে মানাসিকের বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। বমান আলোচনার জন্য শুধু এটুকু জানলে হবে যে, মানাসিক মানে হজের অবশ্য পালনীয় কাজগুলো। যেমন: ইহরাম, তালবিয়া, তাওয়াফ, সাঈ, মিনা-আরাফাত-মুজদিলায় গমন, কঙ্কর নিপে, কোরবানি, মাথা মুণ্ডানো ইত্যাদি। ওই কাজগুলো আদায়ের যে অপূর্ব পদ্ধতি শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেগুলো ভালো করে অনুধাবন করলে স্পষ্ট হবে যে, প্রতিটি কাজই আল্লাহ প্রেমের বড় বড় প্রদর্শনী ও উজ্জ্বল প্রতীক।
চিন্তা করে দেখুন, একজন হাজী হেরেমের সীমায় প্রবেশ করার আগে নিজের মূল্যবান সেলাই করা কাপড়গুলো খুলে ফেলে এবং তৎস্থলে সেলাইহীন কাপড়সম সাদা কিছু কাপড় পরে নেয়। টুপি-পাগড়ি বা মুকুট যেগুলোকে ইজ্জতের প্রমাণ মনে করত, সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে, বিনয়ের জীবন্ত ছবি হয়ে, উলঙ্গমস্তক ও উলঙ্গপদ হয়ে আল্লাহর ঘরের উঠোনে এসে পড়ে। অতঃপর দেওয়ানার মতো দৌড় শুরু করে এবং কাবা শরীফের চতুর্পার্শ্বে চক্করে চক্করে ঘুরতে থাকে। আবার হেরমের এক কোনায় একটি পাথর দেখতে পায়, তখন শুরু করে সেদিকে দৌড়ঝাঁপ। শত ভিড়ের বেড়া ঠেলে সে তাতে চুমু দেয়ার চেষ্টা করে। শত চেষ্টার পর চুমো দিতে না পারলে হাত উঠিয়ে প্রতীকী চুম্বনে নিজের হৃদয়-মন শান্ত করে। এসবের যৌক্তিক প্রমাণ সে পায় না। তবু সে করে যায় প্রেমিকের প্রমাণ দিয়ে যায়।
তাওয়াফ থেকে ফারেগ হয়ে সে একটি জায়গায় আসে, যেখানে সাইয়িদুনা ইবরাহিমের আ. পদরেখা এখনও বিদ্যমান। সেখানে এসে থেমে যায় এবং সেজদাবনত হয়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানো স্থানে নামাজ আদায় কর’ (সূরা বাকারা-১২৫)।
অতঃপর সে বায়তুল্লাহ থেকে কিছু দূরত্বে অবস্থিত দু’টি পর্বত অবলোকন করে। ওগুলোর দিকে তার পা নির্বিঘেœ ও নিশ্চিন্তে দৌড়ে যায়, গিয়ে সে একবার এ পাহাড়ে আবার ওই পাহাড়ে এভাবে সাতটি চক্কর সম্পন্ন করে। এটি অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, পৃথিবীতে শতসহস্র পাহাড় রয়েছে, তবে এই উভয় পাহাড়ের শান ও মান কিন্তু অন্যরকম। এই দুই পর্বতের সম্পর্ক আল্লাহর প্রিয় বাঁন্দী হজরত হাজেরা আর তার কালিজার টুকরা হজরত ইসমাঈল আ. এর সঙ্গে।
আল্লাহর বান্দা ইহরাম পরে নগ্নমস্তকে যখন সাফা-মারওয়া সাঈ করে, তখন তার অবাঞ্ছিত লোম বড় হয়ে যায়, চুলগুলো হয়ে যায় এলোমেলো, অগোছালো। যখন সে সাতটি প্রদণি করে ফেলে তখন ওই চুলকেশ, যা সে রূপ-শোভাবর্ধনের উদ্দেশ্যে গুছিয়ে রেখেছিল তা ুর দিয়ে মুণ্ডন করে ফেলে। বড় হয়ে যাওয়া নখ যা এর আগে নিষিদ্ধ থাকায় কাটেনি, এখন সে কেটে ফেলে। আবার একসময় মিনার দিকে যায়, তাঁবু টাঙায় এবং আরাফাতে গিয়ে সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করে। আরাফাতে জোহরের নামাজের সময় হয়, তখন যে নামাজ সারাজীবন আল্লাহর আইনের তামিলে সবসময় ওয়াক্তমতে পড়ত, সেখানে জোহর আর আসরকে এক সঙ্গে আদায় করে। এর কারণ কি? শুধু এই কারণে যে, তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আরাফাতের ময়দানে জোহর আর আসরকে একত্রিত করে পড়েছিলেন। এতে যুক্তিবুদ্ধির কোনো প্রবেশাধিকার নেই। এখানে না সফর, না যুদ্ধজিহাদ আর না অন্য কোনো বিশেষ প্রয়োজন। ব্যাস, হুকুম হলো যে, আসরকে জোহরের ওয়াক্তে পড়। মাগরিবের সময় হয়, সে পুরো জিন্দেগী সূর্য ডুবে যাওয়ার পরপরই মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিত, কিন্তু এখানে এসে শরিয়তের সেই আইন আর বহাল থাকল না। সে নামাজের ওয়াক্ত দেখে, তারপরও আদায় করা থেকে বিরত থাকে স্রেফ এই কারণে যে, আল্লাহর মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময় নামাজ আদায় করেননি। তিনি এই নামাজ মুজদালিফায় গিয়ে ইশার সঙ্গে পড়েন। এমনকি যখন তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত হয়, তখনও যদি মুজদালিফায় তখনও মাগরিব-এশা একসঙ্গে সে পড়ে। কোনো ব্যতিক্রম হয় না তাতে। মুজদালিফায় পৌঁছার পর সফরে কান্ত মানুষ ভাবে, রাতের পর কিছুণ বিশ্রাম করব। কিন্তু ডাক আসে, মুজদালিফা ত্যাগ করে তাঁবু এখানে (মিনায়) টাঙাও এবং পাথরের খুঁটিকে শয়তান মনে করে পাথর কুচি নিপে কর। যুক্তিবুদ্ধি লাখো বার বলে, এখানে শয়তান কই? দেখছি তো পাথরের বড় বড় খাম্বা, তাতে কেন কঙ্কর মারব? কিন্তু ইশক বলে, এখানে যুক্তির দাসত্ব চলবে না। এখানে চলবে ইশকের গোলামি। অতএব সে মহব্বত ও  প্রেমের সামনে মাথানত করে তিনদিন ধরে তাতে পাথর নিপে করে যায়।
অতঃপর সে মিনায় গিয়ে কোরবানি করছে। কোরবানি করার পর মক্কা নগরীতে ফিরে আসছে। কখনও মরুপ্রান্তরে যাচ্ছে, কখনও বনভূমি গিয়ে অবস্থান করছে। আবার কখনও শহরে চলে আসছে। প্রেমের অবাক লীলা খেলা! শাআয়িরুল্লাহর মান-মর্যাদার দিকে ভ্রূপে না করে পাগলের মতো তাওয়াফ ও দৌড়াদৌড়ি সবকিছুই মহব্বতের দাবি ও এখানকার ভিন্ন রকমের আদব! তার যৌক্তিক কোনো দলিল প্রমাণ মেলা ভার। ব্যাস, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের স্মৃতি, যা জাগ্রত রাখার উপলইে ইবাদতের স্থানে রাখা হয়েছে। এ ভালোবাসা, এ প্রেমে, এ পাগলপনা এগুলোর কোনো ব্যাখ্যা হয় না কলমে, শুধু অনুভব করা কলবে। কবি বলেন, [মুহাব্বত মা’না ওআলফায মেঁ লায়ী নাহী জাতি
ইয়ে ওয়াহ্ নাজুক হাকিকত হ্যায়, জু সমঝায়ী নাহি জাতি]
ভালোবাসাকে শব্দে-বাক্যে ধারণ করা যায় না।
সেটি এমন তত্ত্ব যা অনুভব করা যায়, বোঝানো যায় না।

                      হজ ও উমরাহ : আমলের ফজিলত

                          মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ফাহাদ

হজ-সফরের ফজিলত
হজরত ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’য়ালা হজকারীকে তার উটনীর প্রতি কদমে একটি নেকি লেখেন কিংবা একটি গুনাহ মুছে দেন। অথবা একটি মর্তবা বুলন্দ করেন। সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৮৮৭; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদিস : ৪১১৬
হজরত উবাদা ইবনে ছামিত রা. থেকেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন : আলমু’জামুল আওসাত, হাদিস : ২৩৪১)
হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার ফজিলত
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘এই দুটি রোকন (হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানি) স্পর্শ করা গুনাহগুলোকে মুছে দেয়।’ (জামে তিরমিযি, হাদিস : ৯৫৯) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এই পাথর কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার দু’টি চোখ থাকবে যা দ্বারা সে দেখবে এবং জিহ্বা থাকবে যা দ্বারা সে কথা বলবে। সে ওই ব্যক্তির পে স্যা দেবে যে তাকে সঠিক পন্থায় ইসতিলাম করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৪৪)
বাইতুল্লাহর তাওয়াফের ফজিলত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সে একটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব পাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৫৬)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ হচ্ছে নামাজের মতো। তবে এতে তোমরা কথা বলতে পার। সুতরাং এ সময় যে কথা বলবে সে যেন শুধু উত্তম কথাই বলে। (জামে তিরমিযী, হাদিস : ৯৬০)
সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈর ফজিলত
আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়া আল্লাহর দু’টি নিদর্শন।... (সূরা বাকারা : ১২৮)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ...আর সাফা-মারওয়ায় তোমার সাঈ করা। তা তো ৭০ জন দাস মুক্ত করার সমতুল্য। (বাযযার/কাশফুল আসতার, হাদিস : ১০৮২; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৮৮৭)
আরাফায় উকূফের ফজিলত
হজরত আয়েশা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনোদিনই এমন নেই, যেদিন আল্লাহ তা’য়ালা আরাফার দিনের চেয়েও অধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করেন। আর তিনি তাদের নিকটবর্তী হন। এরপর ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, কী চায় এরা? (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৪৮)
হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা’য়ালা ফেরেশতাদের সঙ্গে আহলে আরাফাকে নিয়ে গর্ব করেন এবং বলেন, আমার এইসব বান্দাকে দেখ, কেমন উস্কোখুস্কো চুলে, ধূলিমলিন হয়ে আমার কাছে এসেছে। (মুসনাদে আহমদ ২/২২৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস :

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন