মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

মেয়েরা মায়ের জাতি

এগার.
গরীব বাবার সন্তান আশরাফ। লেখাপড়ায় যথেষ্ট ভালো। কৃষক বাবা আশরাফকে নিয়ে দু’চোখ ভরে স্বপ্ন দেখেন। ডেফোডিল ইন্সটিটিউট টোকনোলজি (ডিআইটি)’র ছাত্র সে। এই শিা প্রতিষ্ঠানেরই এক ছাত্রীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে সে।
তা যেন এক অন্ধ ভালোবাসা। প্রেমিকাকেই ঘিরে তার সকল স্বপ্ন। কৃষক বাবার স্বপ্ন যেন তার সামনে ম্লান। এরই মধ্যে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে লন্ডন পাড়ি জমায় আশরাফ। সেখানে থাকাবস্থায় একদিন তার বিভাগের এক শিককে ফোন করে তার প্রেমিকার দিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানায়। তখন ওই শিক তাকে জানান, ওকে নিয়ে এখন আর ভাবতে হবে না তোমার। কারণ ও আর এখন তোমার নেই!
শিকের এই কথায় প্রেমিকাকে হারানোর ভয় ঢুকে যায় আশরাফের মনে। এরই মধ্যে ছুটিতে ঢাকায় আসে। দেখা করে প্রেমিকার সঙ্গে। প্রেমিকা ছিলো ধনী বাবার মেয়ে। সে আশরাফকে জানায়, আমাকে পেতে হলে গাড়ি-বাড়ির মালিক হতে হবে।
এরপর থেকে তো আশরাফের মাথায় একটাই চিন্তা, কিভাবে ধনী হওয়া যাবে! কিভাবে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়া যাবে! অনেক ভেবেও কোনো পথ খুঁজে পায় না। অবশেষে এক ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নেয়। তার অভিলাস পুরণ করার জন্য বেছে নেয় এক নোংরা পথ। টার্গেট করে তার আরেক সহপাঠি ফৌজিয়া ফারিয়া বর্ষার ধনী পরিবারকে।
একদিন সকালে আশরাফ কাওরানবাজারে গিয়ে একটি চাপাতি কেনে। এরপর রাত দশটার পর যায় বর্ষাদের কলাবাগানের বাসায়। রাত এগারোটার দিকে হঠাৎ আশরাফ তার কাছে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে চাপাতি বের করে বর্ষার গলায় ধরে এবং বর্ষার পিতার কাছে বিশ লাখ টাকা ও একটি গাড়ি দাবি করে। অন্যথায় বর্ষাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
ঘটনার সময় সেই বাসার সকলের মোবাইল ফোন নিজের কাছে রাখে এবং ল্যান্ডফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ সময় বর্ষার বাবা তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করে ৫০ হাজার টাকার একটি চেক লিখে দেন। কিন্তু আশরাফ ওই চেক নেয়নি। এ সময় আশরাফ বর্ষাদের সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিতে বলে। এতেও বর্ষার পরিবার যখন রাজি হয়নি তখন আশরাফ বর্ষার মা-বাবা ও বোনকে একটি রুমে এবং আরেকটি রুমে গৃহ পরিচারিকাদের জিম্মি করে রাখে।
ভোরের আজান হওয়ার পর আশরাফ হঠাৎ বর্ষার গলায় চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। এ সময় বর্ষার মা এগিয়ে এলে আশরাফ তাকেও চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। তাকে নিবৃত্ত করতে বর্ষার বাবা ছুটে এলে তাকেও আঘাত করে। একপর্যায়ে দরজা খুলে বর্ষা দারোয়ানকে খবর দেয়। পরে তারা বাড়িওয়ালাকেও খবর দেয়। এ সময়ে ভীত-সন্ত্রস্ত আশরাফ দ্রুত নিচে নেমে পালাতে গিয়ে দেখে কলাপসিবল গেট বন্ধ। পরে বাড়ির ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে আত্মগোপন করে।
পরে আশরাফ গ্রেপ্তার হয় পুলিশের হাতে। সে পুলিশের কাছে স্বীকার করে, সহপাঠির প্রেমই সর্বনাশ করেছে আমাকে।
প্রিয় বোন, কোনো এক মনীষীর বাণীতে পড়েছিলাম, “একটি ছেলেকে মানুষ করতে একজন মায়ের লাগে বিশ বছর। আর সেই ছেলেকে নষ্ট করতে একজন মেয়ের লাগে বিশ দিন”। আমাদের সমাজে আশরাফের মতো মেধাবী তরুণরা এভাবেই ঝরে পড়ে সুন্দর জীবন থেকে। আশরাফের বাবার মতো কৃষক বাবার স্বপ্ন এভাবেই ভেঙে খান-খান হয়ে যায়।
এ সব তো ভালোবাসা নয়, বরং সর্বনাশা। ভালোবাসাই যদি থাকবে তবে সেখানে কেন টাকা, বাড়ি-গাড়ি ও আভিজাত্যের লোভ? ভালোবাসাই যদি বা থাকবে তবে সেখানে কেন প্রেমিককে মিথ্যা ও অসম্ভব বিষয়ে উৎসাহ প্রদান?
মেয়েরা মায়ের জাতি। তাদেরকে সম্মান করবে পুরুষ। মেয়েরা ভালোবাসা দিয়ে কঠিন শিলা প্রান্তরে ফুল ফোটাবে। সেই মেয়েরা কেন হবে ছলনাময়ী? নবীপতিœ আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর মতো মেয়ে, জগদ্বিখ্যাত তাপসী রাবেয়া রহ. বসরী রহ. এর মতো মেয়ে কি এই সমাজে আবার জন্ম নিতে পারে না?
পত্রিকায় একটি সংবাদ বেশ আলোড়িত করেছিলো মানুষকে। এক সন্তানের মা কোনো নারীকে তার স্বামী মোবাইল কিনে দিয়েছিল দূরে চাকরিস্থলে থাকা তার সঙ্গে যোগাযোগ রা করতে। এক পর্যায়ে মোবাইলে পরিচিত হয় ওই নারীর এক বাল্যবন্ধু ছেলের সঙ্গে। প্রথমে শুধু কথা হতো দু’জনের মধ্যে, বিভিন্ন বিষয়ে। নিজেদের ভালোলাগা না লাগা বিষয়ে শেয়ার করতো দু’জনে। এক সময় তাদের এ সম্পর্ক অবৈধ প্রেমে রূপ নেয়। ক্রমান্বয়ে তা আরো গভীরে রূপ নেয়।
একদিন ওই নারী ঘুমন্ত সন্তানকে ফেলে চলে যায় তার ওই বাল্যবন্ধুর সঙ্গে। আর যাবার সময় বিবেকের তাড়নায় একটি চিরকুট লিখে রেখে যায় স্বামীকে উদ্দেশ্য করে। তাতে লেখে,
পারলে আমাকে তুমি মা করে দিও! আর জীবনে যদি আবার বিয়ে করো তাহলে স্ত্রীকে মোবাইল কিনে দিও না। কারণ তোমার কিনে দেয়া মোবাইলই আজ আমাকে ঘরছাড়া করলো...।

হায়রে নারী! একটিবারও কি তুই ভাবলি না তোর নিষ্পাপ সন্তানটির কথা। যে সন্তান তোর ঘুমপাড়ানি গান না শোনলে ঘুমোতে পারে না। যে সন্তাননটিকে তুই দশ মাস পেটে ধরে অসহ্য যন্ত্রণা সয়েছিস। যে সন্তান তোকে মিষ্টি মধুর সুরে আম্মু-আম্মু বলে ডাকে। তুই কি একবারও ভাবলি না তোর স্বামীর কথা! যে স্বামী তোকে নিয়ে সুখের স্বর্গ রচনা করতে চেয়েছিলো। যে দূরে চাকরিস্থলে হাজারো কষ্টের পরও শুধু তোকে কল্পনা করে হৃদয়ের নিভৃতে এক চিলতে প্রশান্তি অনুভব করে। যার সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম শুধু তোর জন্য, তোর সন্তানের জন্য। যে স্বামী তোর বুকে মাথা রেখে শত শ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করে। তুই এই সুখের স্বর্গটা ভাঙলি কি করে? তোর কি একটুও বুক কাঁপেনি? তোর কি মনে হয়নি একবারও যে, সর্বদ্রষ্টা একজন কিন্তু উপরে আছেন?
বোন, এ অধমের চোখের অশ্র“ কলমের কালি হয়ে ঝরে পড়ছে। তুমি ফিরে এসো। অন্ধকারের সকল জঞ্জাল দু’পায়ে ঠেলে তুমি বেরিয়ে এসো স্বচ্ছ ও নির্মল আলোর মোহনায়।
আরেকটি ঘটনা তোমাদেরকে বলে আজকের মতো পর্ব শেষ করবো।
মোবাইল ফোন! মোবাইল ফোন! যত বিপত্তি আজ মোবাইল ফোন নিয়ে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ ও প্রতারণার মতো নানা বিপত্তি আজ আমাদের অতীব প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রটির কল্যাণে (!) ঘটে যাচ্ছে অহরহ।
দাউদকান্দির মেয়ে তাহমিদা বেগম। মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় চট্টগ্রামের মনিরুলের সঙ্গে। মনিরুল ফোনে নিজেকে শিতি ও চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেয়।
মোবাইল মানুষকে মিথ্যা বলায় বেশি অভ্যস্ত হয়ে তুলেছে। ধরো, আজকাল অনেক অশিতি ছেলে বা মেয়ে মোবাইলে শিতি পরিচয় দিয়ে অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। চরম এই মিথ্যার আশ্রয় নেয়া কিন্তু তাদের মোবাইলের কারণেই সম্ভব হচ্ছে। অনুরূপ আরো ধরো, অনেকে এক জায়গায় থেকেও মোবাইলের অপর প্রান্তের লোকটিকে আরেক জায়গার কথা নির্দ্বিধায় বলে যাচ্ছে। যা আমরা রাস্তা-ঘাটে ও বাসে বসে প্রায়ই প্রত্য করি। শুরুর দিকে রাহার কথা বলেছিলাম। তার সঙ্গেও কিন্তু মিলন চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলো। সরল মনে রাহা যা বিশ্বাসও করেছিলো। পরিণতিতে রাহার সুন্দর জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে।
যা হোক! আমাদের মূল ঘটনায় আসি। তাহমিদা এক সময় মনিরুলের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আসলে মনিরুলও সেই মোবাইল প্রতারকদের একজন। অশিতি, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ঘরে আছে তার আরো দুই স্ত্রী ও সন্তান। তবুও এক অসহায় মেয়ের জীবন নাশের মরণ খেলায় মেতে উঠেছিল সে।
প্রেম বলে কথা! তাহমিদা প্রেমের টানে দাউদকান্দি থেকে ছুটে যায় চট্টগ্রামে মনিরুলের কাছে। মনিরুল তাকে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়েতে কোনো রেজিষ্ট্রি কাবিন হয়নি। তাহমিদাকে নিয়ে সে তার প্রথম স্ত্রী কহিনূরের চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসায় ওঠে।
কয়েকদিনের মধ্যেই তাহমিদাকে অযথা সন্দেহ করে মনিরুল। এরপর বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় তাহমিদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাশের একটি খালে ফেলে দেয়। পরে মনিরুল চলে আসে ঢাকায়। ওদিকে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয়ের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে থানায় পাঠায় এবং একটি অপমৃত্যুর মামলা করে।
পরবর্তীতে মনিরুল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে সব কথা স্বীকার করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন