মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

ইসলামী জীবন দর্শনে হজ্জের শিক্ষা তাৎপর্য ও করণীয় : মাওলানা হাবিব উল্লাহ মেছবাহ

ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ একটি স্তম্ভ। পৃথিবীর দিক-দিগন্ত হতে আলাহর মেহমান মুসলমানরা হজ্জ করার উদ্দেশ্যে বাইতুলাহ শরীফে প্রতিবছর জিলহজ্জ মাসে সমবেত হয়। বাইতুলাহ বিশ্ব মুসলিমের মিলন কেন্দ্র। জিলহজ্জ মাসেই উদযাপিত হয় পবিত্র হজ্জব্রত, ঈদুল আযহা ও কুরবানী। আলাহ তায়ালা সমগ্র মাখলুকাত সৃষ্টি করার পূর্বে প্রথম বাইতুলাহ সৃষ্টি করেছেন। হজ্জ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বাসনা, আকাক্মখা, সংকল্প, দৃঢ় সংকল্প ও কোন মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের ল্েয দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করা।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জ অর্থ, আলাহর ঘর যিয়ারতের ল্েয সফর করা এবং ব্যাপক অর্থে ‘পবিত্র জ্বিলহজ্জ চাঁদের ৮ তারিখ হতে ১৩ তারিখের মধ্যে নির্ধারিত নিয়মে সুনির্দিষ্ট স্থানে তাওয়াফ যিয়ারত সাফা-মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি ও কঙ্কর নিপেসহ শরীয়ত নির্ধারিত কতিপয় অনুষ্ঠান পালন করাকেই হজ্জ বলে। পবিত্র কুরআন হাকীমে হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম গৃহ যা মানব জাতির জন্য নির্মিত হয়েছে। সে গৃহটি মক্কায় অবস্থিত, যা সমগ্র সৃষ্টিজগতের হিদায়েতের কেন্দ্র স্থান। তার মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শন মাকামে ইব্রাহীম। যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। মানুষের প্রতি আলাহর হক্ব এই যে, এ ঘর পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ যাদের আছে তারা অবশ্যই হজ্জ আদায় করার জন্য এখানে আসবে (আল ইমরান-৯৬, ৯৭)।
‘আর স্মরণ কর সেই ইতিহাসকে যখন আমি এ ঘরকে মানব সভ্যতার কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয়স্থান বানিয়েছিলাম এবং মাকামে ইব্রাহীমকে ‘মুসালা' বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে এ ঘরের তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু, সিজদাহকারীদের জন্য পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখার হুকুম দিয়েছিলাম। (আর স্মরণ কর সেই সময়ের কথা) যখন কা'বাগৃহ নির্মাণকার্য সমাপ্তির পর ইব্রাহীম (আ.) বলেছিলেন, হে আমার রব! তুমি এ নগরকে নিরাপদ জনপদে পরিণত করো। আর এর অধিবাসীদের মধ্যে কারা আলাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী তাদের জন্য বিচিত্র ফলমূল দিয়ে জীবিকা নির্বাহের সংস্থান কর'। (আল-বাকারাহ : ১২৫-১২৬)
হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহ হচ্ছে (১) মুসলমান হওয়া, (২) বালেগ হওয়া, (৩) সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া, (৪) হজ্জ করার মত দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ হওয়া, (৫) যাতায়াতের পথ নিরাপদ হাওয়া (৬) মহিলাদের জন্য মুহরেম সঙ্গী সাথে থাকা।
হজ্জের শিা ও তাৎপর্য : (১) তলবিয়া পাঠ : আলাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও অহীর ভিত্তিতে জীবন পদ্ধতি পরিচালনায় শপথ হজ্জে আলাহর বান্দাহ সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করে উন্মুক্ত মাথায় আলাহর প্রেমে পাগল হয়ে তলবিয়া পাঠ করতে থাকে। তলবিয়া পাঠে নিয়ত সহকারে লাখো লাখো মুসলিম আলাহর আইন অনুযায়ী সমগ্র জীবন পরিচালনার শপথ গ্রহণ করে আরাফাতের ময়দানকে তলবিয়া উচ্চারণের মাধ্যমে মুখরিত করে তোলে।
(২) বিশ্ব সংহতি মানব ঐক্য বিশ্ব জনীন সভ্যতার মিলন কেন্দ্র : হজ্জের মহান অনুষ্ঠান মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব মানব ঐক্য ও অবিচ্ছেদ্য সংহতির এক মহান নিদর্শন। প্রিয়নবী (সা.) আরাফাতের ময়দানে বলেন, ‘আরবের ওপর আযমের এবং আযমের ওপর আরবের কোন প্রাধান্য নেই। সব মানুষ একই আদমের সন্তান। রাসূলের বাণীকে কবি অত্যন্ত সুন্দর করে পেশ করেছেন :
‘চরণে দলিনু অন্ধ যুগের বংশ অহঙ্কার। ভাই ভাই- মিলি মুসলিম যত এক মহাপরিবার'। নাহি ভেদাভেদ আযমী আরবী, একই আদমের সন্তান সবি, ধূলায় রচিত আদম তনয়, গৌরব কিসের তার? হাবশীও যদি সত্যের পথে বরণীয় হয়, এ জগতে তারি নির্দেশ নত মস্তকে মানিবে সুনির্দিষ্ট সুনিশ্চিত'।
(৩) সাম্য মৈত্রীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : হজ্জ দুনিয়ার সাদা কালো, জীর্ণশীর্ণ বিচিত্র ভাষা ও বিচিত্র বর্ণের লোকদের আরাফাতের ও কা'বার চারিপাশে তাওয়াফরত অবস্থায় একত্রিত করে, সম্প্রীতির, মৈত্রীর সৌভ্রাতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও সুমহান শিা প্রদান করে। হজ্জের মধ্যে দুনিয়ার সকল মুসলমান সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়। ইহা সাম্যের এক অপূর্ব দৃশ্য।
(৪) আলাহর অতৃপ্ত মিলন কল্পনায় তৃপ্তি : হজ্জে আলাহর ঘরের যিয়ারতের মাধ্যমে বান্দাহ আলাহর দিদারের কামনায় পরিতৃপ্তি উপভোগ করে।
(৫) মহান নিয়ামত : হজ্জ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদতের সমন্বয়ে আলাহর পথে গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আলাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি অর্জন, আত্মার পরিশুদ্ধি  আধ্যাত্মিক উন্নতির এক মহান নিয়ামত।
(৬) আন্তর্জাতিক সম্মেলন : হজ্জ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিশ্ব সম্মেলন। আরাফাত ময়দান পবিত্র কা'বা বিশ্বমানবতার মহামিলন কেন্দ্র, মানবতার ঐক্য ও সংহতির এক অনুপম সেতুবন্ধন। হজ্জ মুসলমানদের এক বিশ্ব সম্মেলন ও মহোৎসব।
(৭) বিশ্বজনীন জাতীয়তার এক বাস্তব নমুনা : হজ্জ মুসলিম উম্মাকে বিশ্বজনীন জাতীয়তা কা'বা কেন্দ্রিক সভ্যতা ও তাওহীদ তথা আলাহর সার্বভৌমত্ব ভিত্তিক সার্বজনীন সমাজ ও বিশ্বরাষ্ট্র গঠনের এক বাস্তব নমুনা।
(৮) ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে : পি,কে হিট্রি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে হজ্জের বিধান ইসলামের প্রধান ঐক্য সংস্থাপক শক্তি ও বিভিন্ন দেশীয় মুমিনদের মধ্যে অত্যন্ত কার্যকর সূত্র হিসাবে কাজ করে আসছে।
(৯) হজ্জ মাগফিরাত ও তাওবার এক মহান সুযোগ : আলাহর ঘরের যিয়ারত আরাফাতের তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আলাহর বান্দাহ মাগফিরাতের এক মহান সুযোগ লাভ করে। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মকবুল হজ্জের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নহে। হালাল অর্থ বিনিয়োগে হজ্জ সম্পাদনকারীর গুণাহ মাফের নিশ্চয়তা আলাহ রাসূল প্রদান করেছেন।
(১০) আলাহর নির্দেশ পালন : হজ্জ করে আলাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ ইবাদতে উদ্বুদ্ধ হয়। যার ফলশ্রুতিতে বান্দাহ আলাহর সন্তোষ অর্জনে সম হয়। প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন হজ্জ যার উপর ফরয যদি সে ব্যক্তি হজ্জ আদায় না করে মারা যায়, তবে আমি জানি না সে কি ইহুদী হয়ে মরে না নাসারা হয়ে মরে।
(১১) আন্তর্জাতিক েেত্র নেতৃত্বদান : হজ্জ মুসলিমদের ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে বিশ্ব নেতৃত্বের অধীনে আবদ্ধ হওয়ার পথে সীমাহীন প্রেরণা যোগায়।
(১২) ইব্রাহীম (আ.) ও ইসমাঈলের স্মৃতি স্মারক : ‘‘হজ্জ হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তদীয় স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর স্মৃতির স্মারক হাজীদের অন্তরে হজ্জের কার্যাবলী পালনের সময় তাদের কষ্ট কোরবানী ও আত্মত্যাগের চিত্র ভেসে ওঠে।
(১৩) হজ্জ পাপ মোচনকারী : যথাযথভাবে হজ্জ পালন করলে আলাহ তায়ালা বান্দার সকল পাপ মাফ করে দেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, পানি যেমন ময়লা আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেয় তদ্রুপ হজ্জও গুণাহ বিদূরিত করে পবিত্র করে দেয়।
(১৪) ইসলামী জাগরণের মহা সাড়া : হজ্জের সময় মুসলিম দেশগুলোতে বা সারাবিশ্বে ইসলামী মহাজাগরণের এক মহা সাড়া সৃষ্টি হয়। এতে হাজীগণসহ প্রত্যেক মুসলমানদের অন্তরে ইসলামী বিপবের কথা এসে স্থান পায়।
(১৫) হজ্জ দ্বীন কায়েমের মহা শপথ : মুসলমানদের রাজনীতি কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া চাই। হজ্জের মাধ্যমে মুসলমানগণ আলাহর যমিনে দ্বীন কায়েমের মহা শপথ নিতে পারে।
(১৬) জাহান্নামের আযাব থেকে পরিত্রাণ : মহানবী (সা.) বলেন, আলাহ তায়ালা যাকে হজ্জব্রত পালনের সামর্থ দিয়েছেন সে যদি হজ্জ না করে, মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামের ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক আগুনে পতিত হবে।
  রাসূলুলাহ (সা.)-এর রওজা মুবারক যিয়ারত : বিশ্বনবীর রওজা মুবারক মসজিদে নববীর সাথেই সংযুক্ত। সুতরাং মুসলিম মিলাতের জন্য রওজা মুবারক যিয়ারতের ও পরম সৌভাগ্যের সুযোগ রয়েছে। এতদসত্ত্বেও হুজুরের প্রিয়তম সাথীদ্বয় হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত ওমর (রা.)-এর পবিত্র কবরের যিয়ারত ইসলামী আদাব ও তরীকা অনুসারে আদায় করা উত্তম। খুব ছোট আওয়াজে রওজা মুবারকের কাছে দাঁড়িয়ে, আসসালামু আলাইকুম ইয়া রাসুলুলাহ ওয়া রাহমাতুলাহি ওয়া বারাকাতুহু বলে সালাম দিবে এবং শরীয়তের সীমার ভিতরে থেকে হুজুর (সা.)-এর প্রশংসাসূচক বাক্য উচ্চারণ করবে এবং রাসূলের রিসালাতের স্যা প্রদান করে দোয়া করবে। অতঃপর হযরত আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) কে সম্বোধন করে সালাম করবেন এবং তাদের কার্যাবলীর উপর খুশি ও সন্তুষ্টিমূলক শব্দ সংযোজন করে তাদের জন্য দোয়া করবেন। অতঃপর কেবলামুখী হয়ে নিজের মনের সমস্ত গোপন ইচ্ছা আলাহর দরবারে, দীনতা সহকারে জানিয়ে দোয়া জানাবেন। এসবই হচ্ছে সাহাবায়ে কিরাম ও সালকে ছালেহীনের পদ্ধতিতে রওজা মুবারক যিয়ারত।
যিয়ারতে দোয়ায় রাসূলুলাহ (সা.) কে ল্য করে কোন মাকছুদ হাসিলের সময় মুছিবত থেকে নাজাতের, রোগ মুক্তির, দরিদ্রকে ধনী করার ইত্যাদি দোয়া করা শরীয়তে হারাম। কেননা এ সকল দোয়া একমাত্র আলাহ তায়ালাকে ল্য করেই করা যেতে পারে। আলাহ ছাড়া এ সব আরজু পুরা করার মতা আর কারো নেই।

হজ্জের করণীয় কাজ :
১. ৮ ই জ্বিলহজ্জ মিনায় অবস্থান করা।
২. ৯ই জ্বিলহজ্জ আরাফাতে অবস্থান, তালবিয়াসহ যিকির, দোয়া, তাওবা, আরাফাতের খুতবা শ্রবণ ও জোহর আসর একত্রে আদায় করা।
৩. সন্ধ্যার সময় মুযদালিফায় গমন করে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করা।
৪. ১০ই জ্বিলহজ্জ প্রভাতের পর মুযাদলিফা হতে মিনায় গমন ও দ্বিপ্রহরের পূর্বে যুমরায় আকাবায় ৭টি কংকট নিপে ও কুরবানীর পর ইফরাদ ও তামাত্তো হজ্জ আদায়কারীগণ মাথা মুন্ডন বা চুল কর্তন করে ইহরাম খোলা, অতঃপর বিকালে কাবাঘর ৭ বার তাওয়াফ, মাকামে ইব্রাহীমে দু'রাকাত নামায আদায় করে, সাফা মারওয়া ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।
৫. ১১ ও ১২ই জ্বিলহজ্জ মিনায় অবস্থান ও পুর্বের ন্যায় ৭টি কংকর নিপে করা। ১২ তারিখ আসর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করলে ১৩ তারিখে ও পুনঃ তিন জায়গায় ২১টি কংকর নিপে করতে হবে।
৬. অতঃপর দেশে আসার আগে পুনঃ কাবাঘর ৭ বার তাওয়াফ করতে হবে।
আলহামদুলিাহ : আলাহ যাদেরকে হজ্জ ও ওমরা করার তাওফিক দিয়েছেন, তারা যেন শরীয়তের নিয়মে হজ্জ্বের সকল আমল আদায় করে আলাহ তায়ালাকে খুশি করার সুযোগ লাভ করেন-আমিন।
হজ্জের কার্যাবলীর সংপ্তি ধারণা
কাবাঘর তাওয়াফ পাকপবিত্র দেহে সতর ঢাকা অবস্থায় সম্পন্ন করতে হবে। তাওয়াফ করবার সময় কথা বলা নিষেধ। ইহরামের চাদর পরিধানকালে ডান হাত সম্পূর্ণ বাহিরে রেখে ডান বগলের দিক হতে তুলে চাদরের উভয় প্রান্ত বাম কাঁধের উপরে রেখে ইহার পর কাবাঘরকে বামপামে রেখে হাজরে আসওয়াদের নিকট হতে তাওয়াফ শুরু করবে। এই নিয়মে তাওয়াফ সাতবার করতে হবে। প্রতিবার তাওয়াফকালে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা মুস্তাহাব।
তাওয়াফের পর দুঃরাকায়াত তাওয়াফের সালাত আদায় করে কাবাঘরে উত্তর-পূর্ব কোণ সাফা পাহাড়ে যাবেন এবং সাফা মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার সাঈ করবেন। তারপর ওমরা পালনকারী বা তামাত্তু হজ্জ পালনকালী পুরুষ মাথা টাক করাবেন অথবা চুল ছাঁটাবেন। মেয়েরা নখ পরিমাণ চুল ছাঁটাবেন। চুল কাটানোর মাধ্যমে তাঁদের ইহরাম শেষ হবে। স্বাভাবিক পোশাকে স্বাভাবিক অবস্থায় তারা মক্কা মুকাররামায় অবস্থান ও ইবাদত বন্দেগী করবেন। ইফরাদ বা কিরান হজ্জ পালনকারী চুল কাটাবেন না বা ইহরাম ভাঙ্গবেন না। তাঁরা ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান এবং ইবাদত বন্দেগী করবেন।
যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকে হজ্জের কর্মকান্ড শুরু হয়। এদিনে দুপুরের আগে তামাত্তু হজ্জ পালনকারী, যিনি ইতিপূর্বে উমরা করে ইহরাম ছেড়ে মক্কায় অবস্থান করছেন, তিনি পূর্বে ইহরামের সময়ে বর্নিত নিয়মে মক্কা শরীফে নিজের বাসস্থান থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবেন। ইফরাদ ও কিরান হজ্জ পালনকারী যেহেতু ইহরাম অবস্থায় থাকেন, সেহেতু তাঁর জন্য উপরের কিছুই করণীয় নয়, তিনি শুধু অন্যদের মত ‘‘তালবিয়া (লাববাইকা....) পড়তে পড়তে মিনায় রওয়ানা দিবেন। এখন থেকে ১০ তারিখের আকাবাতে কাঁকর/কংকর মারা পর্যন্ত বেশি বেশি তালবিয়া বলতে হবে।
৮ই যিলহজ্জ ফযরের নামাযের পর মিনার দিকে রওয়ানা হবে এবং সেখানে ৯ই যিলহজ্জের ফযর পর্যন্ত অবস্থান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতে হবে। ৯ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে অবস্থান করতে হবে। আরাফার দিন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলিবার সাথে সাথে ইমাম সাহেব জুমার ন্যায় দু'টি খুতবা পাঠ করবেন। হাজী সাহেবগণ মনযোগ সহকারে খোতবা শুনবেন। অতঃপর হাজী সাহেবদেরকে নিয়ে জোহর এবং আছরের নামায একসাথে আদায় করবেন। নামাযের পর হতে কিবলামুখী হয়ে বসে অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় জোরে জোরে তালবিয়া, যিকির, তাওবা, দরুদ শরীফ এবং বিভিন্ন মাছনুন দোয়া ও কান্নাকাটিতে রত থাকবেন। অতঃপর যখন সূর্য অস্ত যাবে, তখন আরাফাতে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফা নামক স্থানে রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবে এবং একই আযানে এশার সময় প্রথমে মাগরিব এবং পরে এশার নামায আদায় করবে। এরপর দিন ১০ই যিলহজ্জ সকালে ফযরের নামায আদায় করে সূর্য উদয়ের পূর্বেই মদিনার দিকে রওয়ানা হবে এবং মিনাতে সর্বপ্রথম জামরায়ে আকাবা অর্থ বড় শয়তানকে ৭টি কংকর নিপে করবে। উলেখ্য থাকে যে, কংকরগুলো মুযদালিফার মাঠ হতে সংগ্রহ করা উত্তম।
কংকর নিপে শেষ করে হাজীগণ কুরবানী আদায় করবে এবং মাথা মুন্ডন করে ইহরাম খুলে হালাল হবে। তারপর হাজী সাহেবগণ স্বাভাবিক পোশাকাদী পরবেন এবং ইহরামের কারণে বর্জনীয় সকল কর্ম করতে পারবেন, শুধুমাত্র স্বামী স্ত্রী মিলন করতে পারবেন না। প্রত্যেক হাজীকে তিন দিন ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ তারিখ মিনায় অবস্থান করে দ্বিপ্রহরের পর তিন স্তম্ভের উপর কংকর নিপে করতে হবে। মিনা হতে প্রত্যাবর্তনের সময় দুই হাত তুলে আলাহ পাকের দরবারে চোখের পানি ছেড়ে কান্নাকাটি করত: পবিত্র মক্কায় ফিরে আসবে। মক্কা ত্যাগ করার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। মক্কা শরীফ হতে নিজ নিজ দেশে ফিরবার প্রাক্কালে শেষবারের মত কাকুতি ও মিনতির সহিত উক্ত আলাহর ঘরে তাওয়াফ করতঃ সমগ্র মুসলিম জাহানের কল্যাণের জন্য এবং দুনিয়ার সকল মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করবেন। মদীনা শরীফ যিয়ারত করার সাথে হজ্বের কোন সম্পর্ক নেই। হজ্জের সকল কর্ম মক্কা শরীফেই শেষ হয়ে যায় তবে হজ্জ্রের সময় মদীনা শরীফ যিয়ারত করে কিছু এবাদত বন্দেগী করা পৃথক একটি নেক আমল। হজ্জের আগে পরে বা যে কোন সময় তা করা যেতে পারে। মহান আলাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র হজ্জব্রত পালনের এবং মদিনা শরীফ যিয়ারতের তাওফিক দান করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন