হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রিয়পুত্র ইসমাইলকে (আ.) কোরবান করেছিলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ইসমাইল (আ.) বেঁচে গিয়েছিলেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ উত্সর্গের দৃষ্টান্ত আছে। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই সারা পৃথিবীর মুসলমানরা হালাল পশু কোরবানি করে থাকেন। পশু কোরবানি আসলে প্রতীকী কোরবানি। আত্মোত্সর্গের চেতনাই এখানে আসল। এই চেতনার কথাই কাজী নজরুল ইসলাম তার একটি কবিতায় খুবই সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন। কাজী সাহেব কোরবানি নিয়ে বেশকিছু কবিতা লিখেছেন। তাঁর একটি কবিতায় আছে—‘জিয়ারার চেয়ে পিয়ারা যে/আল্লাহর রাহে তাহারে দে’ অর্থাত্ আল্লাহর রাহে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কিশোর বয়স থেকে আমি কোরবানি দেখে আসছি। আমার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ ছিলেন। প্রতিবছরই তিনি ছোটখাটো একটা ছাগল খাসি কোরবানি দিতেন। আমার মনে আছে, এই কোরবানি আমি খুব উপভোগ করতাম। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির পশুর গোশত খেতে আমি খুবই পছন্দ করি। এটা ছোটবেলায় যেমন পছন্দের ছিল, এখনও তেমনি।
আমাদের ছোটবেলায় এখনকার মতো সামাজিক প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে কোরবানি করতে দেখিনি। তখন যারা সামর্থ্যবান ছিলেন, অর্থবিত্তের মালিক ছিলেন, তারা হয়তো একটি বা একাধিক গরু কোরবানি করতেন। কিন্তু কোনো প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখিনি, এখন যেটা কারও কারও মধ্যে ল্য করা যায়।
কোরবানি খুবই তাত্পর্যপূর্ণ একটা ব্যাপার। এর ধর্মীয় অনেক দিক আছে। আমি কবি মানুষ, ধর্মীয় দিকটি সেভাবে বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, কোরবানি খুবই একটা আনন্দদায়ক ব্যাপার। প্রশান্তিদায়ক ব্যাপার। যিনি কোরবানি করেন, তার জন্য এটা সত্যিই আনন্দদায়ক ও প্রশান্তিদায়ক ব্যাপার। আমি নিজে প্রতিবছরই আমার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করে থাকি। বিষয়টি আমি অনুভব করি। ছোটবেলায় তো আমি কোরবানির ঈদের জন্য অপোয় থাকতাম। আমার মনে হয় উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই কোরবানির ব্যাপারটি হয়ে থাকে। নজরুলের কবিতায় কোরবানির চেতনায় পরাধীনতা ও জুলুমের অবসান ঘটানোর আহ্বান আছে। এটা আমার কাছে খুবই সুন্দর একটা প্রসঙ্গ বলে মনে হয়। কেননা উত্সাহ-উদ্দীপনা না থাকলে পরাধীনতা ও জুলুমের অবসান ঘটানো যায় না। আমার এখন মনে নেই বলে নজরুলের কবিতা থেকে উল্লেখ করতে পারছি না। তবে এটা ঠিক যে, এটা তাঁর কবিতায় আছে।
বাংলা সাহিত্যে কোরবানির ব্যাপারটি নানাভাবে এসেছে। দৃষ্টান্তমূলকভাবেই এটা বাংলা সাহিত্যের অনেক স্থানে আছে। আমার এখন অত খুঁটিয়ে মনে নেই। তবে বেশ আছে। কিন্তু হজের অভিজ্ঞতা বাংলা সাহিত্যে কখনও সেভাবে আসেনি। হজের সঙ্গে কোরবানির একটি সম্পর্ক আছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল হজ পালন করার। রাবেতা আল আলম আল ইসলামী নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় আমি হজ পালন করেছিলাম। আমি চেষ্টা করেছি আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু একটা বাংলা সাহিত্যকে দিতে। হজ থেকে ফিরে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম। গল্পটির নাম হলো ‘একটি চুম্বনের জন্য প্রার্থনা’। গল্পটি কেমন হয়েছিল, জানি না। তবে পবিত্র কাবা ঘরে রতি ‘হাজরে আসওয়াদ’ নামক পাথরটি চুম্বন করতে হাজীদের মধ্যে যে ব্যাকুলতা থাকে, সেই ব্যাকুলতা আমি আমার গল্পে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি।
আমাদের সাহিত্যে হজের অভিজ্ঞতা তেমন একটা আসেনি। আমি লিখেছিলাম। আর কেউ যে লেখেনি, এতে সন্দেহ নেই। এর একটা কারণ এই হতে পারে যে, যারা হজ পালন করেছেন তাদের মধ্যে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকের সংখ্যা অপোকৃত কম। এমনিতেই আমাদের দেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিকরা দরিদ্র। ফলে তারা হজব্রত পালনের সুযোগ পায় না। যদি এ দেশের কবি-সাহিত্যিকরা ব্যাপকহারে হজব্রত পালনের সুযোগ পেত, তাহলে খুবই ভালো হতো বলে আমার মনে হয়। এটা হলে হজের অভিজ্ঞতা আমাদের সাহিত্যে নানাভাবে এসে যেত।
অনেকদিন আগে আমি হজ পালন করেছিলাম। সব ঘটনা আমার এখন মনে নেই। একটা বিষয় আমি তখন অনুভব করেছিলাম। হজ করতে গিয়ে আমি অবাক হয়ে দেখেছি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার তরুণ-তরুণীদের। তারা বিয়ে করেই স্বামী-স্ত্রী হজ করতে চলে আসে। এ বিষয়টি আমাকে অবাক করেছিল। আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত বয়সকালে হজ করতে যায়। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ছেলেমেয়েদের আমি দেখেছি, তারা অত্যন্ত ভক্তিভরে হজ পালন করে। বিষয়টিকে খুব উপভোগ করে তারা।
আমি হজব্রত পালন করে আসার পর গল্পটি তো লিখেছিলাম, একটি কবিতা লেখারও খুব ইচ্ছে ছিল কাবাশরীফ নিয়ে। নানা সময় পরিকল্পনাও করেছিলাম, আবার ভুলেও গেছি। কবিতা তো সব সময় লেখা যায় না। মনের ভেতর যথার্থ প্রস্তুতি না ঘটলে এটা লেখা যায় না। মনে যদি সেভাবে এসে যায়, তাহলে লেখা হয়ে যায়। আমার এখনও ইচ্ছা আছে কবিতাটি লেখার। মনে যদি সেভাবে এসে যায়, তাহলে লিখেও ফেলতে পারি।
কিশোর বয়স থেকে আমি কোরবানি দেখে আসছি। আমার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ ছিলেন। প্রতিবছরই তিনি ছোটখাটো একটা ছাগল খাসি কোরবানি দিতেন। আমার মনে আছে, এই কোরবানি আমি খুব উপভোগ করতাম। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির পশুর গোশত খেতে আমি খুবই পছন্দ করি। এটা ছোটবেলায় যেমন পছন্দের ছিল, এখনও তেমনি।
আমাদের ছোটবেলায় এখনকার মতো সামাজিক প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে কোরবানি করতে দেখিনি। তখন যারা সামর্থ্যবান ছিলেন, অর্থবিত্তের মালিক ছিলেন, তারা হয়তো একটি বা একাধিক গরু কোরবানি করতেন। কিন্তু কোনো প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখিনি, এখন যেটা কারও কারও মধ্যে ল্য করা যায়।
কোরবানি খুবই তাত্পর্যপূর্ণ একটা ব্যাপার। এর ধর্মীয় অনেক দিক আছে। আমি কবি মানুষ, ধর্মীয় দিকটি সেভাবে বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, কোরবানি খুবই একটা আনন্দদায়ক ব্যাপার। প্রশান্তিদায়ক ব্যাপার। যিনি কোরবানি করেন, তার জন্য এটা সত্যিই আনন্দদায়ক ও প্রশান্তিদায়ক ব্যাপার। আমি নিজে প্রতিবছরই আমার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করে থাকি। বিষয়টি আমি অনুভব করি। ছোটবেলায় তো আমি কোরবানির ঈদের জন্য অপোয় থাকতাম। আমার মনে হয় উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই কোরবানির ব্যাপারটি হয়ে থাকে। নজরুলের কবিতায় কোরবানির চেতনায় পরাধীনতা ও জুলুমের অবসান ঘটানোর আহ্বান আছে। এটা আমার কাছে খুবই সুন্দর একটা প্রসঙ্গ বলে মনে হয়। কেননা উত্সাহ-উদ্দীপনা না থাকলে পরাধীনতা ও জুলুমের অবসান ঘটানো যায় না। আমার এখন মনে নেই বলে নজরুলের কবিতা থেকে উল্লেখ করতে পারছি না। তবে এটা ঠিক যে, এটা তাঁর কবিতায় আছে।
বাংলা সাহিত্যে কোরবানির ব্যাপারটি নানাভাবে এসেছে। দৃষ্টান্তমূলকভাবেই এটা বাংলা সাহিত্যের অনেক স্থানে আছে। আমার এখন অত খুঁটিয়ে মনে নেই। তবে বেশ আছে। কিন্তু হজের অভিজ্ঞতা বাংলা সাহিত্যে কখনও সেভাবে আসেনি। হজের সঙ্গে কোরবানির একটি সম্পর্ক আছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল হজ পালন করার। রাবেতা আল আলম আল ইসলামী নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় আমি হজ পালন করেছিলাম। আমি চেষ্টা করেছি আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু একটা বাংলা সাহিত্যকে দিতে। হজ থেকে ফিরে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম। গল্পটির নাম হলো ‘একটি চুম্বনের জন্য প্রার্থনা’। গল্পটি কেমন হয়েছিল, জানি না। তবে পবিত্র কাবা ঘরে রতি ‘হাজরে আসওয়াদ’ নামক পাথরটি চুম্বন করতে হাজীদের মধ্যে যে ব্যাকুলতা থাকে, সেই ব্যাকুলতা আমি আমার গল্পে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি।
আমাদের সাহিত্যে হজের অভিজ্ঞতা তেমন একটা আসেনি। আমি লিখেছিলাম। আর কেউ যে লেখেনি, এতে সন্দেহ নেই। এর একটা কারণ এই হতে পারে যে, যারা হজ পালন করেছেন তাদের মধ্যে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকের সংখ্যা অপোকৃত কম। এমনিতেই আমাদের দেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিকরা দরিদ্র। ফলে তারা হজব্রত পালনের সুযোগ পায় না। যদি এ দেশের কবি-সাহিত্যিকরা ব্যাপকহারে হজব্রত পালনের সুযোগ পেত, তাহলে খুবই ভালো হতো বলে আমার মনে হয়। এটা হলে হজের অভিজ্ঞতা আমাদের সাহিত্যে নানাভাবে এসে যেত।
অনেকদিন আগে আমি হজ পালন করেছিলাম। সব ঘটনা আমার এখন মনে নেই। একটা বিষয় আমি তখন অনুভব করেছিলাম। হজ করতে গিয়ে আমি অবাক হয়ে দেখেছি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার তরুণ-তরুণীদের। তারা বিয়ে করেই স্বামী-স্ত্রী হজ করতে চলে আসে। এ বিষয়টি আমাকে অবাক করেছিল। আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত বয়সকালে হজ করতে যায়। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ছেলেমেয়েদের আমি দেখেছি, তারা অত্যন্ত ভক্তিভরে হজ পালন করে। বিষয়টিকে খুব উপভোগ করে তারা।
আমি হজব্রত পালন করে আসার পর গল্পটি তো লিখেছিলাম, একটি কবিতা লেখারও খুব ইচ্ছে ছিল কাবাশরীফ নিয়ে। নানা সময় পরিকল্পনাও করেছিলাম, আবার ভুলেও গেছি। কবিতা তো সব সময় লেখা যায় না। মনের ভেতর যথার্থ প্রস্তুতি না ঘটলে এটা লেখা যায় না। মনে যদি সেভাবে এসে যায়, তাহলে লেখা হয়ে যায়। আমার এখনও ইচ্ছা আছে কবিতাটি লেখার। মনে যদি সেভাবে এসে যায়, তাহলে লিখেও ফেলতে পারি।
আত্মত্যাগের মহিমা
আ হ সা ন হা বী ব
মোতালেব সাহেব একসময় বাম রাজনীতি করতেন। তারপর হঠাত্ একদিন তার বাম সাইডে প্যারালাইজডের মতো হয়ে গেল। আশপাশে সবাই ফিসফাস করল, ‘এসবই বাম রাজনীতির কুফল!’ শেষমেশ যাহোক, বহু হিল্লি-দিল্লি ঘুরে চিকিত্সা করে সুস্থ হলেন তিনি।
তারপর একদিন তার বোধোদয় হলো। তিনি এক মাহেন্দ্রণে ডিগবাজি দিলেন। ডিগবাজিতে সাধারণত আপসাইড ডাউন হয়; কিন্তু তার েেত্র এক ডিগবাজিতে বাম থেকে ডানে চলে এলেন। তারপর বেশ তরতর করে এগিয়েও গেলেন। তারপর হঠাত্ রাতারাতি এমপি। অবশ্য এর জন্য খরচাপাতিও করতে হয়েছে মন্দ নয়, আফটার অল রাজনীতি এখন বিজনেস! তবে খুব শিগগিরই তার এলাকায় এমন একটি স্লোগান তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল, যার জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না! ‘মোতালেব সাহেবের চামড়া, তুলে নেব আমরা।’
মোতালেব সাহেব চমকে উঠলেন শুনে! বলে কী?
তার কনিষ্ঠ ছেলে এসে জানতে চাইল, ‘ওরা তোমার চামড়া দিয়ে কী করবে, বাবা?’ সাইড থেকে ইমিডিয়েট বড়টা সবজান্তার মতো বলল, ‘জুতা বানাবে।’
মোতালেব সাহেব ধমক দিতে যাবেন—তখন কনিষ্ঠ ছেলের পুনঃপ্রশ্ন, ‘বাটা জুতা, না ইপসি?’
চর্ম উত্পাটনের প্লাস জুতা উত্পাদনের এই ছোট্ট ঘটনার পর থেকেই কেন যেন মোতালেব সাহেবের রাজনীতি থেকে মন উঠে গেল। (অবশ্য এরই মধ্যে যা হাপিস করার তিনি করে নিয়েছেন। শুল্কমুক্ত গাড়ি বিক্রি থেকে শুরু করে লাইসেন্স বিক্রি, ইত্যাদি ইত্যাদি।)
তিনি অবসর জীবনে চলে এলেন। সকালে-বিকালে হাঁটেন, রাতে টিভি দেখেন, মাঝে মাঝে অফিসে গিয়ে এমডির চেয়ারে বসেন। বলাই বাহুল্য, তিনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন। সেটারই এমডি তিনি।
সবই ঠিক ছিল হঠাত্ এক রাতে এক ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলেন। দেখলেন, কে যেন ধারালো ছুরি দিয়ে তার চামড়া ছিলছে। তিনি লাফ দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। এ কী ভয়ানক স্বপ্ন! রাজনীতি ছেড়েছেন সেই কবে। এখন এই স্বপ্ন দেখার মানে কী? দ্বিতীয় রাতেও একই স্বপ্ন দেখলেন। এবারও একরকম লাফিয়ে উঠলেন।‘তোমার সমস্যাটা কি?’ স্ত্রী বিরক্ত হয়ে জানতে চান, ‘আমাকে কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেবে না, নাকি?’
একটা ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলাম।
তাতে সমস্যা কী?
পরপর দু’বার একই স্বপ্ন দেখলাম যে।
কী স্বপ্ন, শুনি।
কে যেন ছুরি দিয়ে আমার চামড়া তুলে নিচ্ছে।
তোমার যে মোটা চামড়া—ও তুলে নিলেও কারও কোনো কাজে লাগবে না। বলে স্ত্রী ফের পাশ ফিরে নাক ডাকতে শুরু করেন। আর হতভম্ব মোতালেব সাহেব নির্ঘুম বসে থাকেন বাকি রাত। এখানে শেষ হলেও হতো। পরদিন ঘুম থেকে উঠে বাইরে মর্নিং ওয়াক করতে বের হতে গিয়ে দেখেন, তার গেটে কে বা কারা পোস্টার সেঁটে রেখে গেছে। তাতে লেখা, ‘আপনার চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করুন।’ আসলে কথাটা হবে, ‘আপনার কোরবানির চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করুন।’ কোরবানি শব্দটার ওপর আরেকটা পোস্টার থাকায় দেখাচ্ছে, ‘আপনার চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করুন।’
এই ঘটনায় যেন মোতালেব সাহেব আরও মুষড়ে পড়লেন, যদিও লোকজন দিয়ে গেট থেকে সব পোস্টার তোলা হয়েছে, গেট এখন পরিষ্কার। কিন্তু হঠাত্ একদিন সেই গেট ঠেলে একদল লোক এসে হাজির। প্যান্ট-শার্ট পরা, স্মার্ট। বয়সে তরুণই বলা যায় তাদের।
কী ব্যাপার?
আমরা এই পাড়ারই ছেলেপেলে।
তা বুঝলাম। কী করতে পারি?
আপনার চামড়াটা দিলেই হবে!
কি ক্কি! রীতিমত আঁতকে উঠলেন তিনি।
মানে আপনার কোরবানির গরুর চামড়া।
একটু পরে বুঝতে সমস্যা হলো না যে, তারা আসলে কোরবানির গরুর চামড়াই চাইছে, তারটা নয়। তারা পাড়ার চামড়া বাইরে যেতে দেবে না, ব্যবসা করে ছাড়বে।
শেষ পর্যন্ত একটা গরু অবশ্য কেনা হলো। মোতালেব সাহেবই পছন্দ করে কিনলেন। নাদুসনুদুস শক্তিমান বোকা একটা প্রাণী যে জানেও না ক’দিন বাদে তার চামড়া ছিলে নেয়া হবে। সেজন্য তার কোনো টেনশন নেই। দিব্যি জাবর কাটছে। আর সামান্য একটা স্বপ্নে দেখে তিনি মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। তিনি গভীর আবেগে বোকা প্রাণীটার গায়ে হাত রাখেন। মাথা ঘুরিয়ে প্রাণীটা তার দিকে তাকায়। মোতালেব সাহেবের মনে হয়, সে যেন বলছে, ‘ভয়ের কিছু নেই। চামড়া তোলার জন্য আমরা তো আছিই। এটাকেই তো তোমরা আত্মত্যাগের মহিমা বল, তাই না?’ মোতালেব সাহেবের দু’চোখের কোণ কোনো কারণ ছাড়াই চিকচিক করে ওঠে। গরুটা কিছু না বুঝেই ‘হাম্বা’ বলে একটা ডাক দেয়। কী বুঝে কে জানে!
তারপর একদিন তার বোধোদয় হলো। তিনি এক মাহেন্দ্রণে ডিগবাজি দিলেন। ডিগবাজিতে সাধারণত আপসাইড ডাউন হয়; কিন্তু তার েেত্র এক ডিগবাজিতে বাম থেকে ডানে চলে এলেন। তারপর বেশ তরতর করে এগিয়েও গেলেন। তারপর হঠাত্ রাতারাতি এমপি। অবশ্য এর জন্য খরচাপাতিও করতে হয়েছে মন্দ নয়, আফটার অল রাজনীতি এখন বিজনেস! তবে খুব শিগগিরই তার এলাকায় এমন একটি স্লোগান তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল, যার জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না! ‘মোতালেব সাহেবের চামড়া, তুলে নেব আমরা।’
মোতালেব সাহেব চমকে উঠলেন শুনে! বলে কী?
তার কনিষ্ঠ ছেলে এসে জানতে চাইল, ‘ওরা তোমার চামড়া দিয়ে কী করবে, বাবা?’ সাইড থেকে ইমিডিয়েট বড়টা সবজান্তার মতো বলল, ‘জুতা বানাবে।’
মোতালেব সাহেব ধমক দিতে যাবেন—তখন কনিষ্ঠ ছেলের পুনঃপ্রশ্ন, ‘বাটা জুতা, না ইপসি?’
চর্ম উত্পাটনের প্লাস জুতা উত্পাদনের এই ছোট্ট ঘটনার পর থেকেই কেন যেন মোতালেব সাহেবের রাজনীতি থেকে মন উঠে গেল। (অবশ্য এরই মধ্যে যা হাপিস করার তিনি করে নিয়েছেন। শুল্কমুক্ত গাড়ি বিক্রি থেকে শুরু করে লাইসেন্স বিক্রি, ইত্যাদি ইত্যাদি।)
তিনি অবসর জীবনে চলে এলেন। সকালে-বিকালে হাঁটেন, রাতে টিভি দেখেন, মাঝে মাঝে অফিসে গিয়ে এমডির চেয়ারে বসেন। বলাই বাহুল্য, তিনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন। সেটারই এমডি তিনি।
সবই ঠিক ছিল হঠাত্ এক রাতে এক ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলেন। দেখলেন, কে যেন ধারালো ছুরি দিয়ে তার চামড়া ছিলছে। তিনি লাফ দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। এ কী ভয়ানক স্বপ্ন! রাজনীতি ছেড়েছেন সেই কবে। এখন এই স্বপ্ন দেখার মানে কী? দ্বিতীয় রাতেও একই স্বপ্ন দেখলেন। এবারও একরকম লাফিয়ে উঠলেন।‘তোমার সমস্যাটা কি?’ স্ত্রী বিরক্ত হয়ে জানতে চান, ‘আমাকে কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেবে না, নাকি?’
একটা ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখলাম।
তাতে সমস্যা কী?
পরপর দু’বার একই স্বপ্ন দেখলাম যে।
কী স্বপ্ন, শুনি।
কে যেন ছুরি দিয়ে আমার চামড়া তুলে নিচ্ছে।
তোমার যে মোটা চামড়া—ও তুলে নিলেও কারও কোনো কাজে লাগবে না। বলে স্ত্রী ফের পাশ ফিরে নাক ডাকতে শুরু করেন। আর হতভম্ব মোতালেব সাহেব নির্ঘুম বসে থাকেন বাকি রাত। এখানে শেষ হলেও হতো। পরদিন ঘুম থেকে উঠে বাইরে মর্নিং ওয়াক করতে বের হতে গিয়ে দেখেন, তার গেটে কে বা কারা পোস্টার সেঁটে রেখে গেছে। তাতে লেখা, ‘আপনার চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করুন।’ আসলে কথাটা হবে, ‘আপনার কোরবানির চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করুন।’ কোরবানি শব্দটার ওপর আরেকটা পোস্টার থাকায় দেখাচ্ছে, ‘আপনার চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করুন।’
এই ঘটনায় যেন মোতালেব সাহেব আরও মুষড়ে পড়লেন, যদিও লোকজন দিয়ে গেট থেকে সব পোস্টার তোলা হয়েছে, গেট এখন পরিষ্কার। কিন্তু হঠাত্ একদিন সেই গেট ঠেলে একদল লোক এসে হাজির। প্যান্ট-শার্ট পরা, স্মার্ট। বয়সে তরুণই বলা যায় তাদের।
কী ব্যাপার?
আমরা এই পাড়ারই ছেলেপেলে।
তা বুঝলাম। কী করতে পারি?
আপনার চামড়াটা দিলেই হবে!
কি ক্কি! রীতিমত আঁতকে উঠলেন তিনি।
মানে আপনার কোরবানির গরুর চামড়া।
একটু পরে বুঝতে সমস্যা হলো না যে, তারা আসলে কোরবানির গরুর চামড়াই চাইছে, তারটা নয়। তারা পাড়ার চামড়া বাইরে যেতে দেবে না, ব্যবসা করে ছাড়বে।
শেষ পর্যন্ত একটা গরু অবশ্য কেনা হলো। মোতালেব সাহেবই পছন্দ করে কিনলেন। নাদুসনুদুস শক্তিমান বোকা একটা প্রাণী যে জানেও না ক’দিন বাদে তার চামড়া ছিলে নেয়া হবে। সেজন্য তার কোনো টেনশন নেই। দিব্যি জাবর কাটছে। আর সামান্য একটা স্বপ্নে দেখে তিনি মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। তিনি গভীর আবেগে বোকা প্রাণীটার গায়ে হাত রাখেন। মাথা ঘুরিয়ে প্রাণীটা তার দিকে তাকায়। মোতালেব সাহেবের মনে হয়, সে যেন বলছে, ‘ভয়ের কিছু নেই। চামড়া তোলার জন্য আমরা তো আছিই। এটাকেই তো তোমরা আত্মত্যাগের মহিমা বল, তাই না?’ মোতালেব সাহেবের দু’চোখের কোণ কোনো কারণ ছাড়াই চিকচিক করে ওঠে। গরুটা কিছু না বুঝেই ‘হাম্বা’ বলে একটা ডাক দেয়। কী বুঝে কে জানে!
কোরবানিতে কোলেস্টেরল চিন্তা
ডা. স জ ল আ শ ফা ক
কোলেস্টেরল এবং কোরবানির ঈদ, এই দু’য়ের মাঝে একটা নীরব সম্পর্ক রয়েছে। কোরবানি মানেই খাবারে বাড়তি চর্বির উপস্থিতি। লালমাংস, পোলাও এবং চর্বি-ঘিয়ের মিলনমেলা হচ্ছে কোরবানি ঈদের ডাইনিং টেবিল। খাওয়ার পর এই চর্বি বাসা বাঁধে মানুষের রক্তে, বেড়ে যায় রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা। কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি থাকা মানেই রক্তে শত্রুর সঙ্গে বসবাস। রক্তের বাড়তি কোলেস্টেরল বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হৃিপণ্ডের মাংসপেশিকে নির্জীব মৃতাবস্থায় নেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। আর এ কারণেই কোরবানির ভোজনে কোলেস্টেরলের কথা মনে রাখতে হবে, বিশেষ করে যাদের রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি কিংবা বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে।
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে কোলেস্টেরল একটি ভীতিকর উপাদান। বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানোর পর রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা জেনে নেয়া প্রয়োজন। কারণ, কোলেস্টেরল নীরবে আপনার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। মানুষের শরীরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী দু’টি অঙ্গের অসুস্থতার জন্যই কোলেস্টেরলকে দায়ী করা যায়। হৃিপণ্ডের হার্টঅ্যাটাক এবং মস্তিষ্কের স্ট্রোক—এ দু’য়ের জন্য অনেক সময়ই কোলেস্টেরলকে দোষারোপ করা হয়ে থাকে।
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়েই অনেকের মাঝেই বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ রক্তে টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ২০০ মি.গ্রা./ডিএল থাকলেই সেটাকে নিরাপদ বলে মনে করেন। আসলে ব্যাপারটা কিন্তুু তা নয়। টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০ মি. গ্রা./ ডিএল বা তার নিচে হলে তাকে নিরাপদ মাত্রা বলা যায়। সাধারণভাবে নিরাপদ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক দেখা যায় না। কিন্তুু কোনো কোনো েেত্র কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০-২০০ থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কোলেস্টেরল মাত্রা ৩০০-এর চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হতে পারে। প্রকৃতপে ১৬ বছর মেয়াদি আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোকের কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০-২০০-এর মধ্যে, তাদের প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই কোলেস্টেরল নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে এ সম্পর্কে সচেতন হওয়াটাই হচ্ছে আসল কাজ। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল মাত্রা কমানোর ব্যবস্থাও নিতে হবে।
ধরুন আপনি সুস্থ আছেন, কিন্তুু কোলেস্টেরল মাত্রা ১৯৮ অথবা ১৮৯। কোলেস্টেরলের এই মাত্রা নিয়ে বিমর্ষ হওয়ার কিছু নেই। দেখে নিন আপনার এইচডিএল (হাইডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা ভালো কোলেস্টেরল মাত্রা। তারপর হিসাব করে নিন টোটাল কোলেস্টেরল এবং এইচডিএল-এর। যদি এই অনুপাত ৪-এর নিচে থাকে তবে আপনি রিলাক্স মুডে থাকতে পারেন। তখন সত্যিকার অর্থেই আপাতত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে আপনি মুক্ত বলে ধরে নিতে পারেন। কাজেই টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ২০০-এর বেশি হলেই যে তা ঝুঁকিপূর্ণ হবে এেেত্র সেটা প্রযোজ্য নয়। কারণ, উচ্চমাত্রার এইচডিএল (ভালো জাতের কোলেস্টেরল) হার্ট অ্যাটাকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কিন্তুু কোলেস্টেরল মাত্রা ৩০০-এর বেশি থাকাটা আসলেই খুব বেশি বলে ধরে নিতে হবে।
যেহেতু কোরবানি মানেই পশুর মাংস এবং কোলেস্টেরল, তাই মাংসকে হৃিপণ্ডের জন্য কিছুটা নিরাপদ করতে মাংস থেকে চর্বি বাদ দেয়া যেতে পারে। এেেত্র কিছু কৌশল মেনে চলা যেতে পারে। যেমন, মাংসের দৃশ্যমান চর্বি মাংস কাটার সময়েই কেটে কেটে বাদ দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া রান্নার আগে মাংসকে আগুনে ঝলসে নিলেও খানিকটা চর্বি গলে পড়ে যায়। আবার মাংসকে হলুদ-লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে ফ্রিজে ঠাণ্ডা করলেও কিছুটা চর্বি মাংস থেকে বেরিয়ে জমাকৃত অবস্থায় থাকবে। তখন বাড়তি চর্বিটুকু চামচ দিয়ে আঁচড়িয়ে বাদ দেয়া খুবই সহজ। আবার মাংসকে র্যাক বা ঝাঁঝরা পাত্রে রেখে অন্য একটি পাত্রের উপর বসিয়ে চুলোয় দিলে নিচের পাত্রটিতে মাংসের ঝরে যাওয়া চর্বি জমা হবে। এই পদ্ধতিতেও মাংসের কিছুটা চর্বি বিদায় হবে। মাংস ছাড়া অন্য উত্স থেকে যাতে কোলেস্টেরল কম আসে, সে বিষয়েও ল্য রাখা যেতে পারে। এেেত্র রান্নার কাজে ঘি, বাটার অয়েল ব্যবহার না করে সয়াবিন কিংবা পামঅয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। মিষ্টান্ন তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে স্কিমড বা ননীতোলা দুধ। একইভাবে ডিমের তৈরি যে কোনো খাবার থেকে কুসুমকে বাদ দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া প্রচুর শাকসবজি ফলমূল খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। খাবারের সঙ্গে সালাদ রাখতে হবে। সালাদ এবং শাকসবজি খাবারের চর্বিকে শরীরে শোষিত হতে বাধা দেয়। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন ১০ গ্রামের মতো দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৫-১০ শতাংশ কমতে পারে।
অবাক ব্যাপার হচ্ছে, পশুদের এথেরোস্কেলরোসিস কিংবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে শোনা যায় না। যদিও অনেক পশু শুধু মাংস ভণ করেই বেঁচে থাকে। কিন্তু তারপরও পশুদের হার্ট অ্যাটাক জাতীয় রোগ হয় না। কারণ, পশুর স্বল্পদৈর্ঘ্যের খাদ্যনালীটি এমনভাবে ডিজাইন করা, যা শাকসবজি হজমের জন্যই বেশি উপযোগী। যার ফলে পশুর শরীরে শোষিত কোলেস্টেরলের প্রায় পুরোটাই ভালো জাতের কোলেস্টেরল এইচডিএল। কিন্তু মানুষের পরিপাকতন্ত্র সে তুলনায় অনেক দীর্ঘ বলে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার পর খারাপ জাতের কোলেস্টেরল এইচডিএলই বেশি শোষিত হয়। কাজেই কোলেস্টেরল মাত্রা কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চাইলে পশুচর্বি বর্জন করতে হবে বিশেষভাবে। এতে রক্তে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল-এলডিএল মাত্রা কমে যাবে। পাশাপাশি যদি শাকসবজি খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া যায়, সে েেত্র শাকসবজির এন্টি অক্সিডেন্ট রক্তনালীর ভেতরের দেয়ালে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল এলডিএল’র আঠালোভাবে লেগে থাকার প্রবণতা হ্রাস করে।
যা হোক, কথা হচ্ছিল কোরবানি নিয়ে। কোরবানি অর্থাত্ কোরবানির মাংস নিয়ে বলতে গিয়ে বলা হয়ে গেছে কোলেস্টেরল সম্পর্কে, সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক সম্পর্কেও বলা হয়েছে। শেষ করার আগে একটা কথা বলে রাখি, কোরবানির মর্মকথা হচ্ছে আত্মত্যাগ। কোরবানিতে মাংস ভোজনের ব্যাপারে আত্মত্যাগের মহিমাকে অনুসরণ করলেই কিন্তু বাড়তি কোলেস্টেরলের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
হজপূর্ব দিনগুলোর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য
মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী
চান্দ্রমাসের সর্বশেষ মাস জিলহজ। এ মাস আল্লাহর দেয়া বারো মাসের অন্যতম।
রমজান মাসের শেষ দশ রাত যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনও খুবই মাহাত্ম্যপূর্ণ। আল্লাহপাক বলেন, ‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাতের।’ (ফাজর ১-২)। এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) বলেন, এখানে দশ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতকে বোঝানো হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর যাতে তারা মহান আল্লাহকে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে বিশেষভাবে স্মরণ করে।’ (হজ-২৮)। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ইঙ্গিত করা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, কোনো আমলই এ দশ দিনের আমলের সমক নয়। সাহাবারা (রা.) প্রশ্ন করলেন, জিহাদও নয়? তিনি উত্তর দিলেন, না জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, যে ব্যক্তি জানমাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো কিছু নিয়ে ফেরত আসেনি। (অর্থাত্ যিনি জানমাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহিদ হয়ে গেছেন, তার এ আমল জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমলের সমক হতে পারে) (বোখারি) মিশকাত ১২৮ পৃষ্ঠা ও তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, জিলহজের দশ দিনের চেয়ে আর কোনো দিন আল্লাহর কাছে অতীব প্রিয় নয়, যে দিনে তার জন্য ইবাদত করা হয়। জিলহজের ওই দিনগুলোতে প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমান। (তিরমিজি, ইবনে মাজা)।
আমরা যারা এ মাসে হজ করা থেকে বঞ্চিত, তারা সবাই ঘরে বসে বসে জিলহজ মাসের প্রথম দশকে সাধ্যমত নেকির কাজ করে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে ধন্য হতে পারি। হজরত সাঈদ বিন জুবায়ের বলেন, ‘আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)। জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন বেশি পরিমাণে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। (দারেমি)।
আমরা যারা হজে যেতে পারিনি, তারা আরাফার দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে অতীতের এক বছর ও ভবিষ্যতের এক বছরের গুনাহ মাফ পেতে পারি। নবীজী (সা.) ফরমান ‘আমি আল্লাহর কাছে চাই, আরাফার দিনের (যে দিন হাজিরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করে, জিলহজ মাসের ৯ তারিখ) রোজার বিনিময়ে যেন অতীতের এক বছর এবং ভবিষ্যতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মুসলিম)। আরাফার এ দিনটি বছরের সেরা দিন, যেমন লাইলাতুল কদর বছরের সেরা রাত। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফায় অবস্থান করা হজের ৩টি রোকনের অন্যতম একটি। যদি কোনো কারণে এটি ছুটে যায়, তবে হজ হবে না। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ফরমান, আরাফার দিন আল্লাহ প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং আরাফায় অবস্থানরত হাজিদের নিয়ে ফেরেস্তাদের কাছে গর্ব করে বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকাও, তারা উস্কোখুস্কো মাথায় ধুলামিশ্রিত শরীর নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ‘লাব্বাইক লাব্বাইক’ ধ্বনি দিতে দিতে এ ময়দানে এসে হাজির হয়েছে। আমি তোমাদের সাী রেখে বলছি, আমি তাদের মা করে দিলাম। ফেরেস্তারা বলেন, হে রব! অমুক তো এ গুনাহ করেছে, অমুক তো অপরাধী। আল্লাহ বলেন, আমি তাদেরও মাফ করে দিলাম। আরাফার দিনের চেয়ে অধিকসংখ্যক জাহান্নামিকে আল্লাহ অন্য কোনো দিন মাফ করেন না। (শরহুস সুন্নাহ)।
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে কোলেস্টেরল একটি ভীতিকর উপাদান। বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানোর পর রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা জেনে নেয়া প্রয়োজন। কারণ, কোলেস্টেরল নীরবে আপনার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। মানুষের শরীরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী দু’টি অঙ্গের অসুস্থতার জন্যই কোলেস্টেরলকে দায়ী করা যায়। হৃিপণ্ডের হার্টঅ্যাটাক এবং মস্তিষ্কের স্ট্রোক—এ দু’য়ের জন্য অনেক সময়ই কোলেস্টেরলকে দোষারোপ করা হয়ে থাকে।
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়েই অনেকের মাঝেই বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ রক্তে টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ২০০ মি.গ্রা./ডিএল থাকলেই সেটাকে নিরাপদ বলে মনে করেন। আসলে ব্যাপারটা কিন্তুু তা নয়। টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০ মি. গ্রা./ ডিএল বা তার নিচে হলে তাকে নিরাপদ মাত্রা বলা যায়। সাধারণভাবে নিরাপদ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক দেখা যায় না। কিন্তুু কোনো কোনো েেত্র কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০-২০০ থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কোলেস্টেরল মাত্রা ৩০০-এর চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হতে পারে। প্রকৃতপে ১৬ বছর মেয়াদি আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোকের কোলেস্টেরল মাত্রা ১৫০-২০০-এর মধ্যে, তাদের প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই কোলেস্টেরল নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে এ সম্পর্কে সচেতন হওয়াটাই হচ্ছে আসল কাজ। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল মাত্রা কমানোর ব্যবস্থাও নিতে হবে।
ধরুন আপনি সুস্থ আছেন, কিন্তুু কোলেস্টেরল মাত্রা ১৯৮ অথবা ১৮৯। কোলেস্টেরলের এই মাত্রা নিয়ে বিমর্ষ হওয়ার কিছু নেই। দেখে নিন আপনার এইচডিএল (হাইডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা ভালো কোলেস্টেরল মাত্রা। তারপর হিসাব করে নিন টোটাল কোলেস্টেরল এবং এইচডিএল-এর। যদি এই অনুপাত ৪-এর নিচে থাকে তবে আপনি রিলাক্স মুডে থাকতে পারেন। তখন সত্যিকার অর্থেই আপাতত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে আপনি মুক্ত বলে ধরে নিতে পারেন। কাজেই টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ২০০-এর বেশি হলেই যে তা ঝুঁকিপূর্ণ হবে এেেত্র সেটা প্রযোজ্য নয়। কারণ, উচ্চমাত্রার এইচডিএল (ভালো জাতের কোলেস্টেরল) হার্ট অ্যাটাকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কিন্তুু কোলেস্টেরল মাত্রা ৩০০-এর বেশি থাকাটা আসলেই খুব বেশি বলে ধরে নিতে হবে।
যেহেতু কোরবানি মানেই পশুর মাংস এবং কোলেস্টেরল, তাই মাংসকে হৃিপণ্ডের জন্য কিছুটা নিরাপদ করতে মাংস থেকে চর্বি বাদ দেয়া যেতে পারে। এেেত্র কিছু কৌশল মেনে চলা যেতে পারে। যেমন, মাংসের দৃশ্যমান চর্বি মাংস কাটার সময়েই কেটে কেটে বাদ দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া রান্নার আগে মাংসকে আগুনে ঝলসে নিলেও খানিকটা চর্বি গলে পড়ে যায়। আবার মাংসকে হলুদ-লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে ফ্রিজে ঠাণ্ডা করলেও কিছুটা চর্বি মাংস থেকে বেরিয়ে জমাকৃত অবস্থায় থাকবে। তখন বাড়তি চর্বিটুকু চামচ দিয়ে আঁচড়িয়ে বাদ দেয়া খুবই সহজ। আবার মাংসকে র্যাক বা ঝাঁঝরা পাত্রে রেখে অন্য একটি পাত্রের উপর বসিয়ে চুলোয় দিলে নিচের পাত্রটিতে মাংসের ঝরে যাওয়া চর্বি জমা হবে। এই পদ্ধতিতেও মাংসের কিছুটা চর্বি বিদায় হবে। মাংস ছাড়া অন্য উত্স থেকে যাতে কোলেস্টেরল কম আসে, সে বিষয়েও ল্য রাখা যেতে পারে। এেেত্র রান্নার কাজে ঘি, বাটার অয়েল ব্যবহার না করে সয়াবিন কিংবা পামঅয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। মিষ্টান্ন তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে স্কিমড বা ননীতোলা দুধ। একইভাবে ডিমের তৈরি যে কোনো খাবার থেকে কুসুমকে বাদ দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া প্রচুর শাকসবজি ফলমূল খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। খাবারের সঙ্গে সালাদ রাখতে হবে। সালাদ এবং শাকসবজি খাবারের চর্বিকে শরীরে শোষিত হতে বাধা দেয়। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন ১০ গ্রামের মতো দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৫-১০ শতাংশ কমতে পারে।
অবাক ব্যাপার হচ্ছে, পশুদের এথেরোস্কেলরোসিস কিংবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে শোনা যায় না। যদিও অনেক পশু শুধু মাংস ভণ করেই বেঁচে থাকে। কিন্তু তারপরও পশুদের হার্ট অ্যাটাক জাতীয় রোগ হয় না। কারণ, পশুর স্বল্পদৈর্ঘ্যের খাদ্যনালীটি এমনভাবে ডিজাইন করা, যা শাকসবজি হজমের জন্যই বেশি উপযোগী। যার ফলে পশুর শরীরে শোষিত কোলেস্টেরলের প্রায় পুরোটাই ভালো জাতের কোলেস্টেরল এইচডিএল। কিন্তু মানুষের পরিপাকতন্ত্র সে তুলনায় অনেক দীর্ঘ বলে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার পর খারাপ জাতের কোলেস্টেরল এইচডিএলই বেশি শোষিত হয়। কাজেই কোলেস্টেরল মাত্রা কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চাইলে পশুচর্বি বর্জন করতে হবে বিশেষভাবে। এতে রক্তে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল-এলডিএল মাত্রা কমে যাবে। পাশাপাশি যদি শাকসবজি খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া যায়, সে েেত্র শাকসবজির এন্টি অক্সিডেন্ট রক্তনালীর ভেতরের দেয়ালে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল এলডিএল’র আঠালোভাবে লেগে থাকার প্রবণতা হ্রাস করে।
যা হোক, কথা হচ্ছিল কোরবানি নিয়ে। কোরবানি অর্থাত্ কোরবানির মাংস নিয়ে বলতে গিয়ে বলা হয়ে গেছে কোলেস্টেরল সম্পর্কে, সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক সম্পর্কেও বলা হয়েছে। শেষ করার আগে একটা কথা বলে রাখি, কোরবানির মর্মকথা হচ্ছে আত্মত্যাগ। কোরবানিতে মাংস ভোজনের ব্যাপারে আত্মত্যাগের মহিমাকে অনুসরণ করলেই কিন্তু বাড়তি কোলেস্টেরলের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
হজপূর্ব দিনগুলোর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য
মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী
চান্দ্রমাসের সর্বশেষ মাস জিলহজ। এ মাস আল্লাহর দেয়া বারো মাসের অন্যতম।
রমজান মাসের শেষ দশ রাত যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনও খুবই মাহাত্ম্যপূর্ণ। আল্লাহপাক বলেন, ‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাতের।’ (ফাজর ১-২)। এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) বলেন, এখানে দশ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতকে বোঝানো হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর যাতে তারা মহান আল্লাহকে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে বিশেষভাবে স্মরণ করে।’ (হজ-২৮)। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ইঙ্গিত করা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, কোনো আমলই এ দশ দিনের আমলের সমক নয়। সাহাবারা (রা.) প্রশ্ন করলেন, জিহাদও নয়? তিনি উত্তর দিলেন, না জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, যে ব্যক্তি জানমাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো কিছু নিয়ে ফেরত আসেনি। (অর্থাত্ যিনি জানমাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহিদ হয়ে গেছেন, তার এ আমল জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমলের সমক হতে পারে) (বোখারি) মিশকাত ১২৮ পৃষ্ঠা ও তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, জিলহজের দশ দিনের চেয়ে আর কোনো দিন আল্লাহর কাছে অতীব প্রিয় নয়, যে দিনে তার জন্য ইবাদত করা হয়। জিলহজের ওই দিনগুলোতে প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমান। (তিরমিজি, ইবনে মাজা)।
আমরা যারা এ মাসে হজ করা থেকে বঞ্চিত, তারা সবাই ঘরে বসে বসে জিলহজ মাসের প্রথম দশকে সাধ্যমত নেকির কাজ করে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে ধন্য হতে পারি। হজরত সাঈদ বিন জুবায়ের বলেন, ‘আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)। জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন বেশি পরিমাণে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। (দারেমি)।
আমরা যারা হজে যেতে পারিনি, তারা আরাফার দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে অতীতের এক বছর ও ভবিষ্যতের এক বছরের গুনাহ মাফ পেতে পারি। নবীজী (সা.) ফরমান ‘আমি আল্লাহর কাছে চাই, আরাফার দিনের (যে দিন হাজিরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করে, জিলহজ মাসের ৯ তারিখ) রোজার বিনিময়ে যেন অতীতের এক বছর এবং ভবিষ্যতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মুসলিম)। আরাফার এ দিনটি বছরের সেরা দিন, যেমন লাইলাতুল কদর বছরের সেরা রাত। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফায় অবস্থান করা হজের ৩টি রোকনের অন্যতম একটি। যদি কোনো কারণে এটি ছুটে যায়, তবে হজ হবে না। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ফরমান, আরাফার দিন আল্লাহ প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং আরাফায় অবস্থানরত হাজিদের নিয়ে ফেরেস্তাদের কাছে গর্ব করে বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকাও, তারা উস্কোখুস্কো মাথায় ধুলামিশ্রিত শরীর নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ‘লাব্বাইক লাব্বাইক’ ধ্বনি দিতে দিতে এ ময়দানে এসে হাজির হয়েছে। আমি তোমাদের সাী রেখে বলছি, আমি তাদের মা করে দিলাম। ফেরেস্তারা বলেন, হে রব! অমুক তো এ গুনাহ করেছে, অমুক তো অপরাধী। আল্লাহ বলেন, আমি তাদেরও মাফ করে দিলাম। আরাফার দিনের চেয়ে অধিকসংখ্যক জাহান্নামিকে আল্লাহ অন্য কোনো দিন মাফ করেন না। (শরহুস সুন্নাহ)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন